স্বাধীনতাবিরোধীর ছেলেকে আ.লীগের কমিটিতে রাখায় ক্ষোভ

স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা পালন করা এক ব্যক্তির ছেলেকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে আহ্বায়ক করা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা।

শাহরাস্তি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিজমেহার গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তাঁর বাবা চেরাগ আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শাহরাস্তি পৌর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর আগে পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও পৌরসভা মেয়র আবদুল লতিফ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেন। এতে নিজমেহার গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক করা হয়। এর আগে মোহাম্মদ আলী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্য ও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। পরে তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। যদি তাঁর বাবা অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে তার পরিণতি তিনি ভোগ করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, তাঁর বাবার কাজের পরিণতি তাঁকে ভোগ করতে হবে কেন? দলাদলির কারণে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে দাবি করে মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিমের ষড়যন্ত্রের শিকার। দলের মধ্যে দলাদলির কারণে এত বছর পরে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠানো হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদুল কবির অভিযোগ করেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সক্রিয় থাকার পরও কীভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি নিধন ও কুখ্যাত রাজাকার চেরাগ আলীর পুত্র মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক বানানো হয়? মুক্তিযুদ্ধের সময় চেরাগ আলীর নেতৃত্বে শাহরাস্তিতে হত্যা, ধর্ষণ ও হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে। চেরাগ আলীর পুত্র মোহাম্মদ আলী জিয়াউর রহমানের যুব কমপ্লেক্সের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফ্রিডম পার্টির সদস্য হন।’ যারা মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে কমিটি দিয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও পৌরসভার মেয়র আবদুল লতিফ বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী ২০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদে ছিলেন। তৃণমূলের কাছ থেকে প্রস্তাব আসায় আমরা তাঁকে আহ্বায়ক করেছি। সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে তিনি বাদ পড়ে যাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা রাজাকার ছিলেন কিন্তু তিনি (মোহাম্মদ আলী) তো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

এ বিষয়ে পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান বেপারী বলেন, চেরাগ আলী স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন। এটি সর্বজন স্বীকৃত। মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি আমরা গুরুত্ব নিয়ে দেখছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিম তাঁর ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সত্য ঘটনা। তিনি ঘৃণা ও ধিক্কার জানান। পাশাপাশি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত প্রতিকার চান।

মোহাম্মদ আলীর করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্র করতে যাব কেন? তাঁর (মোহাম্মদ আলী) বাবা স্বীকৃত রাজাকার। উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি জানেন। শুধু মোহাম্মদ আলী নন, যারা তাঁকে আহ্বায়ক করে কমিটি দিয়েছেন, তাঁদের বিচার দাবি করছি।’