শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, নোটিশ পেলেই ক্লাসে ফিরবেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ফাইল ছবি
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ফাইল ছবি

আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার ১৬ দফা দাবি পূরণে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাস পেয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাতটায় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

১৫ জুন ঈদের ছুটি শেষে বুয়েট খোলার দিনই শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এই আন্দোলন শুরু করেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের কার্যবিবরণী শুক্রবার নোটিশ আকারে প্রকাশ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেটি প্রকাশিত হলেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ওই নোটিশ পেলেই তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন।

আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে তিনটায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ক্যাম্পাসে আসেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সঙ্গে একধরনের ফারাক তৈরি হওয়ায় কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট আর সৃষ্টি হবে না।

এরপর বুয়েটের সাতটি হলের তিনজন করে মোট ২১ জনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উপাচার্যের কক্ষে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী, বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাতটার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিল। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বুধবার আমি বুয়েট ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে অনেকক্ষণ দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করি। এরপর আজ আমরা এখানে এসেছি। প্রতিটি দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। তাদের দাবিগুলো যথেষ্ট যৌক্তিক এবং এগুলো পূরণ করা প্রয়োজন।’

দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি রয়েছে, যেগুলো পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং কত দিনের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে উপাচার্য সম্মতও হয়েছেন। নিশ্চয়ই সময়মতো এগুলোর ব্যবস্থা হবে। কয়েকটি দাবি আছে, যেগুলো একাডেমিক কাউন্সিলের ব্যাপার। সেসব ক্ষেত্রে সরাসরি আমাদের কিছু করার নেই। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিলের কাছে আবেদন করবে, উপাচার্য মহোদয় সুপারিশ করবেন, আমরাও একাডেমিক কাউন্সিলকে অনুরোধ করব। যেহেতু অনেক শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন, আশা করব তাঁরাও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। কয়েকটি ব্যাপার আছে, যেখানে মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় আছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সে ব্যাপারগুলোতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে কোথাও একটু ভুল–বোঝাবুঝি থাকতে পারে, কোথাও কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকতে পারে। তবে আমরা সবাই মিলে দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাব। এই মেধাবী শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ, তারাই দেশকে এগিয়ে নেবে।’

শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালকের অপসারণ। তাঁদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রকল্যাণ দপ্তর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এ পদে যিনি থাকবেন, তিনি যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হন, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেন সমন্বয় থাকে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব।

সাবেকুন নাহার সনির নামে ছাত্রী হলের নামকরণের দাবির বিষয়ে দীপু মনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবার বসবেন।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখপাত্র বুয়েট শিক্ষার্থী আনিস রহমান সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, কোন কোন দাবি কত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার সে বিষয়ে একটি নোটিশ দেওয়া হবে। নোটিশটি পেলে আমরা শনিবার থেকে ক্লাসে ফিরে যাব।’