ব্যাংকের অনিয়মে শ্বেতপত্র চান মোকাব্বির

মোকাব্বির খান। ফাইল ছবি
মোকাব্বির খান। ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও টাকা পাচার নিয়ে জাতীয় সংসদে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান। একই সঙ্গে তিনি ঋণ খেলাপিদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করার দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান এই দাবি জানান।

এছাড়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মোকাব্বির খান। নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোট বিমুখতা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটের ফয়সালা করতে হবে।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর কমানোর দাবি জানান সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য মতিয়া চৌধুরী। সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদ ৯ শতাংশ আছে। কিন্তু উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। গ্রামের বিধবা অসহায় নারীরা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, গাড়ি কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সেখানে কেন অসহায় পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে হাত দিতে হলো। অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সালমা ইসলাম। তিনি বলেন, কালো টাকা আর সাদা টাকা সব টাকার ক্ষমতা সমান। কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তাতে ফ্ল্যাট বিক্রি বাড়বে। কিন্তু শিল্পে বিপ্লব হবে না। এ জন্য শর্ত ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখতে হবে। এতে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছে তারাও টাকা ফিরিয়ে আনবেন। ৫ বছরের জন্য এ সুযোগ উন্মুক্ত রাখলে শিল্প খাতে বিপ্লব হবে। তিনি শিল্প ঋণের জন্য বিশেষ তহবিল করার দাবি জানান।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এবারের বাজেট প্রবৃদ্ধি নির্ভর উন্নয়ন মডেলের বাজেট। এ ধরনের বাজেটে ন্যায্যতার প্রশ্ন উপেক্ষিত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ এ ধরনের বাজেট থেকে সরে এসেছে। এ ধরনের বাজেট ধনীদের আধিপত্য বিস্তার ঘটায়। কল্যাণমুখী নীতি বাজেট থেকে হারিয়ে গেছে।

ধান নিয়ে এবার কৃষকদের দুর্দশা প্রসঙ্গে সাধন চন্দ মজুমদার বলেন, তাঁরা ব্যথিত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তালিকা করে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনেছে। ২০০টি শুধু ধানের সাইলো করার জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তখন আরও বেশি ধান কেনা সম্ভব হবে।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাজেট তুলনামূলক আধুনিক বাজেট। কিন্তু ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তারল্য সংকট বাড়বে। এখন সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ। তিনি দ্রুত ব্যাংক কমিশন গঠন করার দাবি জানান।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম বলেন, এফআর টাওয়ার নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদের মধ্যে বিরোধী দলের কাজী ফিরোজ রশীদ, সরকারি দলের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, আব্দুস সোবহান মিয়া, মীর মোস্তাক আহমদ, বেনজির আহমদ, সংরক্ষিত আসনের ওয়াসিকা আয়শা খান, অপরাজিতা হক প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।