সেই ৩১ ইটভাটার মালিকদের নামে মামলা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইটভাটা চালাতে কথিত ‘জাল আদেশ’ দেখানো এবং ‘জাল নথি তৈরির’ ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুরের ২৯টি, নীলফামারীর ১টি ও রংপুরের ১টি ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.আ.হামিদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গত ২০ মে বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১টি ইটভাটা চালাতে কথিত ‘জাল আদেশ’ এবং ‘জাল নথি’ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে তিন জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার তদন্ত নিশ্চিত করতে বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন বিষয়টি কার্যতালিকায় থাকবে।

বৃহস্পতিবার দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার যমুনা ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী হাসান শাহরিয়ার, আরবি ব্রিকসের রবিউল আলম মুন্সী, এইচবি ব্রিকসের এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, অর্ণব ব্রিকসের নুর আলম ও ইব্রাহীম আলী মণ্ডল, বারী ব্রিকসের ফখরুল ইসলাম শাহ, এআরবি ব্রিকসের রেজওয়ানুল হক, আরটি ব্রিকসের মো. তাশরিফুল, এসএ ব্রিকসের আমানুল্লাহ প্রামাণিক, জেএস ব্রিকসের শাহরিয়ার ইফতেখারুল আলম চৌধুরী, ফাইভ স্টার ব্রিকসের নজরুল ইসলাম, হক ট্রেডার্সের জিকরুল হক, মাইশা ব্রিকসের রেজাউল ইসলাম, এসপি ব্রিকসের পলাশ কুমার রায়, শফী ব্রিকসের মো. শফিকুল ইসলাম, আজাদ ব্রিকসের আবুল কালাম আজাদ, হামিদ অ্যান্ড সন্স ব্রিকসের মো. মোকারম হোসেন।

এ ছাড়া আসামির তালিকায় আরও আছেন ফুলবাড়ী উপজেলার রহমান ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ওরফে মিল্টন, নবী ব্রিকসের মাসুদুর রহমান চৌধুরী, এলএইচবি ব্রিকসের লোকমান হাকিম, এসবি ব্রিকসের মঞ্জুরী-ইশ-শাহাদৎ। বিরল উপজেলার এমবি ব্রিকসের মাসুদ রানা, এ এম ব্রিকসের রবিউল হাসান। চিরিরবন্দর উপজেলার এনএইচ ব্রিকসের নাজমুল হুদা, আরএ ব্রিকস-১ এবং আরএ ব্রিকস-২ এর রফিকুল ইসলাম। দিনাজপুর সদরের পিআর ব্রিকসের পলিন চন্দ্র রায় এবং এআর ব্রিকসের মাহফুজুল হক আনার। কাহারোল উপজেলার এএস ব্রিকসের এস এম হায়দার। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার এনআরবি ব্রিকসের শফিকুর রহমান। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কাজী ব্রিকসের কুদরতি খুদা এবং আসাদুজ্জামান।

তবে দিনাজপুর সদরের এ আর ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুল হক আনার প্রথম অলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে তিনি বিরলের জনৈক মোস্তফার কাছে ভাটা বিক্রি করে দিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ অনেক আগেই জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হয়বতপুর গ্রামের পাশে যমুনা ব্রিকস ইটভাটার কারণে হয়বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ চরম সমস্যা হচ্ছিল। ভাটা বন্ধে স্থানীয় লোকজন প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করলেও ভাটা বন্ধ হচ্ছিল না। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা মনওয়ারা জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে একটি চিঠি লেখে। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নজরে আসে। ভাটা বন্ধে দুই মন্ত্রী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভাটাটি বন্ধ করতে গিয়ে দেখা যায় যে যমুনা ইটভাটার লাইসেন্স নেই। উচ্চ আদালতের রিটের মাধ্যমে সেটি চলছিল।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ইটভাটার কারণে শিশুদের উদ্বেগের খবর তুলে ধরে এ নিয়ে পৃথক রিট শুনানির উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পাওয়া একাধিক ‘কথিত’ আদেশ আদালতে নজরে আনে রাষ্ট্রপক্ষ। রিট দুটি হচ্ছে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর দায়ের করা ১৫০৯৩/২০১৭ এবং অন্যটি ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর দায়ের করা ১৪৬০৫/২০১৮ নম্বর রিট। ২০১৭ সালের কথিত রিটে আবেদনকারী ২২ জন ও ২০১৮ সালের কথিত রিটে আবেদনকারী ২৬ জন। এরপর আদালত সংশ্লিষ্ট শাখার সুপারকে ডেকে ‘রিট আবেদন’ ও রাষ্ট্রপক্ষের দেখানো ‘আদেশের নথি’ সরবরাহ করার মৌখিক নির্দেশ দেন। নকল দুটি যাচাই করে দেখা যায়, ওই নকলগুলো রিট শাখা থেকে সরবরাহ করা হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সই জাল করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে ৩১ ইটভাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ওই তিন জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। গত ২০ মে ৩১ ইটভাটার মালিককে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।