১৭ গ্রামের মানুষের এক নৌকা

ঠাকুরগাঁও সদর ও পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদে সেতু নেই। এ কারণে ১৭টি গ্রামের মানুষকে একটিমাত্র নৌকায় পারাপার হতে হয়। নৌকাটি ছেড়ে গেলে অপর পাড়ের লোকদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। গত বৃহস্পতিবার পীরগঞ্জের চিরকুঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁও সদর ও পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদে সেতু নেই। এ কারণে ১৭টি গ্রামের মানুষকে একটিমাত্র নৌকায় পারাপার হতে হয়। নৌকাটি ছেড়ে গেলে অপর পাড়ের লোকদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। গত বৃহস্পতিবার পীরগঞ্জের চিরকুঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ভামদা গ্রামে টাঙ্গন নদের চিরকুঘাট এলাকায় সেতু নেই। শুকনো মৌসুমে এ নদের দুই পারের ১৭ গ্রামের মানুষের ভরসা একটিমাত্র নৌকা। বর্ষায় তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা চলে না। তখন আট-নয় কিলোমিটার ঘুরে চলতে হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের সবচেয়ে বড় নদ টাঙ্গন। এটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বোচাপুকুর হয়ে হাবিবপুর গ্রাম দিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলায় ঢুকেছে। পরে বৈরচুনার রানীঘাটা দিয়ে এটি ভারতে প্রবেশ করেছে। নদটির এক পারে পীরগঞ্জের কোষারানীগঞ্জ ও সৈয়দপুর, অন্য পারে সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়ন।

এ নদ দিয়ে রামদেবপুর, ভামদা, নাকাটি, আকাশিল, গরুরা, বৈরামপুর, কোষাডাঙ্গীপাড়া, কোষাবন্দর, বেগুনবাড়ি, দানারহাট, দেবীতলী, শালগড়া, কোঠাপাড়া, ইনুয়া, শিমুলটিয়া, বোচাপুকুর ও হরিটা গ্রামের মানুষকে চলাচল করতে হয়। শুকনো মৌসুমে এ ১৭ গ্রামের মানুষ অতিরিক্ত পথ বাঁচাতে ভামদা চিরকুঘাটে এসে নৌকায় উঠে টাঙ্গন নদী পার হয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াত করে। তাদের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেশি। নদের দুই পারের গ্রামগুলোর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা খেতের পণ্য হাটে নিয়ে যেতে কষ্ট ও বাড়তি খরচের সম্মুখীন হচ্ছেন।

উত্তর ভামদা ও কোষারানীগঞ্জ গ্রামের কয়েকজন বলেন, তাঁরা ওই জায়গায় সেতু নির্মাণের জন্য ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদের কাছে অনেকবার দাবি জানিয়েছেন। সাংসদের যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভামদা চিরকুঘাটে নদের ওপর ১০০ মিটার সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে এলজিইডি। কিন্তু আট-নয় বছর ধরে আর কেউ মাথা ঘামান না।

কোষারানীগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফাও বলেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তিনি এখানে সেতুর চেষ্টা করছেন। তবে কাজ হচ্ছে না।

পীরগঞ্জের উত্তর ভামদা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ট চন্দ্র রায়, শালগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্ষীরোদ চন্দ্র ও রামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক বাদশারুল ইসলাম জানান, ভামদা চিরকুঘাট দিয়ে নদের ওপারের বিভিন্ন গ্রামের ছয়-সাত শ মানুষ প্রতিদিন এপারে আসে। এপারের ৯-১০টি গ্রামের মানুষ একই ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে সদর উপজেলার দানারহাট হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করে। সারা বছর নদীতে পানি থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও ভামদা চিরকুঘাটের একটি নৌকা হাজারো মানুষের ভরসা। নৌকাটি এক পাড় থেকে ছেড়ে গেলে অপর পাড়ের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়। বর্ষাকালে তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা চলে না। তাই মানুষ অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে খনগাঁও টাঙ্গন সেতু বা কোষারানীগঞ্জ সেতু দিয়ে যাতায়াত করে।

কোষাডাঙ্গীপাড়া গ্রামের কাঁচামালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ময়নুল হক বলেন, ‘আট-নয় কিলোমিটার রাস্তা ও বাড়তি খরচ বাঁচাতে আমি দোকানের মাল নিয়ে ভামদা চিরকুঘাটে নৌকায় পার হয়ে নাকাটিহাট যাই। এখানে সেতু হইলে আমি বাঁচি, দশ গ্রামের মানুষও বাঁচে।’

নাকাটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন বলেন, পাঁচ-ছয়টি গ্রামের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ভামদা চিরকুঘাটে নৌকায় নদী পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতে আসে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা খুব দরকার।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) পীরগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ভামদা চিরকুঘাটে ১০০ মিটার সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ২০১৩ সালের মার্চে মৃত্তিকা জরিপ বিভাগের একদল লোক নদের তলদেশের বালু তুলে নিয়ে যান। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।