হামলার ভয়ে নৌকার ৫০০ কর্মী এলাকাছাড়া?

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নৌকার পক্ষে কাজ করায় নেতা-কর্মীদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর ও মাছের ঘের লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলা এড়াতে নির্বাচনের পরদিন থেকে ৫০০ জনের বেশি লোক বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ার।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে মোস্তফা সরোয়ার এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

১৮ জুন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের এজাজ আহমেদ প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নৌকার ভরাডুবির কারণ হিসেবে আগে থেকেই স্থানীয় সাংসদের অসহযোগিতার অভিযোগ করে আসছিলেন নৌকার প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ার। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা সরোয়ার অভিযোগ করেন, ডুমুরিয়ার সাংসদ, তাঁর ছেলেসহ অনুসারীরা নৌকা প্রতীককে পরাজিত করেই ক্ষান্ত হননি; নির্বাচনের পর নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, দোকানে হামলা, ঘের দখল করে মাছ লুটপাট করছেন। যাঁরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হামলাকারীদের একটাই কথা, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছিস, এখন চাঁদা দিবি, নয়তো বাড়ি ছাড়বি, আর মার খাবি ফ্রি’। গোটা ডুমুরিয়া উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হামলায় আহত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন নৌকার কর্মী উপস্থিত ছিলেন। মোস্তফা সরোয়ার তাঁদের দেখিয়ে বলেন, ‘এঁদের দোষ কী? প্রধানমন্ত্রী নৌকা আমাকে দিয়েছেন বলেই তাঁরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। আর নৌকার পক্ষে কাজ করে তাঁরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এখন তাঁদের সংখ্যালঘু বলা হচ্ছে না।’ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের মাছের ঘের লুট ও টাকা ছিনতাই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নৌকার ওই পরাজিত প্রার্থী বলেন, খুলনা-৫ আসনের সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথমে প্রতিমন্ত্রী ও পরে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিত্ব পান। বর্তমানে তিনি ওই আসনের সাংসদ। একজন আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়ে উপজেলা নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তাতে কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু যে নৌকা প্রতীকের ভোটারদের ওপর তাঁর বাহিনী বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেই ভোটাররাই তো নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছেন। তাহলে এবার নৌকায় ভোট দিয়ে তাঁরা কেন মার খাবেন? বাড়িছাড়া হবেন? কেনই-বা তাঁরা চাঁদা দেবেন? ব্যক্তির ওপর কারও আক্রোশ থাকতেই পারে, কিন্তু দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটারদের অপরাধ কোথায়?

নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ডুমুরিয়া থানায় শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি অভিযোগকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন মোস্তফা সরোয়ার। এ ছাড়া সহিংসতা বন্ধ ও সাধারণ মানুষ যেন বাড়িতে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আটলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রতাপ রায়। তিনি অভিযোগ করেন, বিজয়ী ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে সরাসরি কাজ করতে দেখা গেছে। এ কারণে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিরাপদে থাকলেও হামলার শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তিনি বর্তমান সাংসদের বিএনপি-জামায়াতপ্রীতির কথা তুলে ধরে বলেন, বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী হামলা ও মামলার শিকার হলেও নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

বিএনপি-জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা-৫ আসনের সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, নৌকা ডোবানোর জন্যই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নৌকায় ভোট দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে যেসব কেন্দ্রে কখনো নৌকা পাস করেনি, শুধু ওই সব কেন্দ্রেই নৌকা পাস করেছে। নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের কোনো ভোট পাননি। নির্বাচনের পর ডুমুরিয়ার পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন রাতে কয়েকটি ঝগড়ার ঘটনা ঘটলেও তা তেমন গুরুতর নয়। আর এখন কিছু ঘটলেও তা রাজনৈতিক নয়।