বেদখলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শতবর্ষের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী প্রান্তে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিচে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান ও খাবার ঘর। ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী প্রান্তে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিচে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান ও খাবার ঘর। ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্য স্থাপনা দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। পাবনার ঈশ্বরদীর পাকা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবর্তী পদ্মা নদীর ওপর এই সেতু স্থাপিত। বর্তমানে সেতুর পাকা সীমানায়, পিলার ঘেঁষে ও সেতুর নিচে জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান ও খাবার ঘর। যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা পড়ে থাকার কারণে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে সেতুটির।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাকা প্রান্তে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রক্ষা বাঁধে সিঁড়ির নিচ থেকে নদীর চরের শেষ সীমানা পর্যন্ত নিচে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল পড়ে রয়েছে। সেতুর নিচে পিলার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ১১টি মনিহারি ও খাবারের দোকান। মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুর রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে রয়েছে। দখল হওয়ার কারণে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী ও পর্যটকেরা নানা বিড়ম্বনায় পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে যেখানে-সেখানে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রক্ষা বাঁধে প্রান্তে পাঁচটি দোকানঘর দেখতে পাওয়া যায়।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় একটি ইস্পাত স্থাপনা হওয়ায় প্রতিদিন বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক দেখতে আসেন সেতুটি। এই সেতুর ৩০০ মিটার ভাটিতে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য রয়েছে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ লালন শাহ সেতু। কিন্তু দখল ও ময়লা-আবর্জনার কারণে ব্যাহত হচ্ছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সৌন্দর্য।

ফতেমোহাম্মদপুর থেকে আসা আসলাম হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে আসে। কিন্তু বর্তমানে পাকা অংশে সেতুর নিচ এবং ওপরের অংশে অবৈধ দখলদারেরা দোকান নির্মাণ করায় সেতুর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

সেন্টু প্রামাণিক নামের এক দখলদার বলেন, তিনি চার-পাঁচ বছর ধরে সেতুর নিচে মনিহারি ও খাবারের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। কেউ বাধা দেয়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্রতি ছয় মাস পরপর তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনার শুধু উপরিভাগের ‘লোহার খাঁচার’ অংশ দেখভালের দায়িত্ব পাকশী সেতু বিভাগের। সেতুর নিচের অংশের দায়িত্ব বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী (ডিইএন-২) কার্যালয়ের। তাই সেতুর নিচে দখলের জায়গা দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁর নয়। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-২ আরিফুল ইসলাম বলেন, সেতুর নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও অবৈধ দোকান গড়ে ওঠায় পাকশী রেলওয়ের প্রকৌশলী বিভাগ থেকে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে দখলদারমুক্ত হবে সেতু এলাকা।