১০৩টি সেতু নির্মাণকাজে রাতে এল চিঠি, পরদিনই দরপত্র বিক্রি শেষ

বরাদ্দের চিঠি আসে রাতে। পরদিনই সব দরপত্র বিক্রি শেষ। এভাবেই কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ১০৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজের দরপত্র বিক্রি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এসব সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

অভিযোগ উঠেছে, অনেক ঠিকাদার দরপত্রের বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি। আবার যাঁরা জেনেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে দরপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের কারণে দরপত্র কিনতে পারেননি। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাধারণ ঠিকাদারেরা জানান, মাত্র এক দিন সময় দেওয়ায় অনেক ঠিকাদার দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি। এ সুযোগে প্রভাবশালী একটি মহল দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। কয়েকটি উপজেলায় দরপত্র কিনতেই পারেননি সাধারণ ঠিকাদারেরা।

জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুস সবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে স্পেশাল মেসেজে (বিশেষ বার্তা) চিঠি পাঠাইছে। আজকেই (বৃহস্পতিবার) দরপত্র বিক্রি শুরু, আজকেই শেষ করতে হবে। আমরা নিজেরাও কিছু জানি না। প্রত্যেক উপজেলায় বরাদ্দের চিঠি চলে গেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে এ রকম কখনো হয়নি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জেলার ছয়টি উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তায় সর্বোচ্চ ১৫ মিটার দীর্ঘ ১০৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আসে। বুধবার রাতে অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়। মাত্র এক দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ২০টি, মিরপুরে ২৬টি, ভেড়ামারায় ৬টি, খোকসায় ১৩টি, দৌলতপুরে ২০টি ও কুমারখালী উপজেলায় ১৮টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত কমপক্ষে ১০ দিন আগে এ ধরনের চিঠি আসে। সময় দিয়ে এসব কাজ করতে হয়। না হলে নানা সমস্যা হয়। এক দিনের মধ্যে এত কিছু করা, এবারই প্রথম দেখলাম।’

>

মাত্র এক দিন সময় দেওয়ায় অনেক ঠিকাদার দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি
এ সুযোগে প্রভাবশালী একটি মহল দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করছে

মিরপুর উপজেলার একজন ঠিকাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। মিরপুরে সব দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী একটি মহল এ কাজ করছে। তাই কোনো সাধারণ ঠিকাদার দরপত্র কিনতে পারেননি। এ উপজেলায় সাড়ে চার কোটি টাকার কাজ হবে। কাজ ভাগাভাগি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

কুমারখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কুমারখালীতে যেসব ঠিকাদার এসেছেন, তাঁদের দরপত্র দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার একজন ঠিকাদার বলেন, এক দিন সময় দিয়ে কোনো দরপত্রের কার্যক্রম আগে হয়নি। এতে সাধারণ ঠিকাদারেরা বেকায়দায় পড়েছেন। কাজ নিয়ে চরম নয়ছয় হচ্ছে।

ওই দিন দুপুরে খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাফফারা তাসনীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিডিউল বিক্রি হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, এক দিনের মধ্যে কাগজপত্র রেডি করতে অনেক সময় লাগতেছে। উন্মুক্তভাবে ঠিকাদার যাঁরা কিনতে আসছেন, তাঁদের রিসিট দেওয়া হচ্ছে, রাত ১২টার মধ্যে কাগজপত্র দেওয়া হবে।’

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আহমেদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বেলা দুইটা পর্যন্ত একটি দরপত্রও বিক্রি হয়নি। হয়তো বিকেল পর্যন্ত হয়ে যাবে।’ বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর মিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘কয়টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে জানা নেই। পরে ফোন করে জানাচ্ছি।’ পরে তিনি প্রথম আলোকে জানান, দরপত্র বিক্রি শেষ। কাল রোববার দরপত্র জমা ও বাছাই করা হবে।