কনস্টেবলের চাকরিতে লেনদেনে এসআই ও সাংবাদিকের স্ত্রী গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সাংবাদিকের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এই দুজন হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী ও শাহানাতুল আরেফিন ওরফে সুমি (৩৫)। আজ শনিবার তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এসআই মোহাম্মদ আলী জামালপুর আদালতে কর্মরত। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইনছান আলীর ছেলে। সুমি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অন্য দিগন্ত পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মো. খায়রুল বাশারের স্ত্রী। তাঁর বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার টুংরাপাড়া গ্রামে। স্ত্রীর গ্রেপ্তারের খবরে স্বামী পালিয়ে গেছেন।

আজ দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তিনি বলেন, আগামী ১ জুলাই টাঙ্গাইল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগ করা হবে। শেরপুরের নামপাড়া গ্রামের মো. ওয়াজেদ আলীর ভাতিজা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাড্ডা গ্রামের মো. কবির মিয়া (১৯) এই পদে চাকরি প্রার্থী। তাঁকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার জন্য এসআই মোহাম্মদ আলী সাংবাদিক খায়রুল বাশারের সঙ্গে ওয়াজেদ আলীকে পরিচয় করিয়ে দেন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ টাকায় এসআইয়ের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চুক্তি হয়। গতকাল খায়রুল বাশার, তাঁর স্ত্রী সুমি এবং এসআই মোহাম্মদ আলী একটি মাইক্রোবাসে করে জামালপুর থেকে টাঙ্গাইল আসেন। আসার পথে ওই মাইক্রোবাসের মধ্যেই সুমির কাছে ওয়াজেদ আলী ১০ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। সন্ধ্যার পর তাঁরা টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসেন। সেখানে আসার পর ওয়াজেদ আলীকে এসপি ব্যস্ত আছেন বলে জানান সুমি। তাই এখন দেখা হবে না। তাঁকে (ওয়াজেদ) নিচতলায় অপেক্ষা করতে বলেন। এ সুযোগে সুমি বাইরে গিয়ে তাঁর স্বামী খায়রুল বাশারকে ব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করে দেন। টাকা নিয়ে খায়রুল বাশার চলে যান।

খায়রুল চলে যাওয়ার কারণে এসপির কার্যালয়ের বাইরে সুমি ও এসআই মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ওয়াজেদ আলী বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় এসপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত ডিবির সদস্যরা তাঁদের আটক করেন। আটকের পর সুমির ব্যাগ থেকে এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা, তাঁর স্বামীর পত্রিকার পরিচয়পত্র এবং তাঁদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুমি জানান, তাঁর স্বামী আট লাখ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। এই টাকা উদ্ধার এবং খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এসপি সঞ্জিত কুমার রায়।

আজ সকালে এসআই মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক খায়রুল বাশার ও তাঁর স্ত্রীকে আসামি করে ওয়াজেদ আলী টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। আজ আদালত গ্রেপ্তার দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান।

এসপি সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, আগামী ১ জুলাই টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন থেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে লোক নেওয়া হবে। সেখানে সরকারি নির্ধারিত পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা ও ফরমের মূল্য তিন টাকা। এ ছাড়া কোন টাকা লাগবে না। এ পদে চাকরি দেওয়ার নামে কেউ টাকা লেনদেন করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।