'ছেলের ধর্ষণের কথা শুনে বাবার আত্মহত্যা'

নাঈম ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
নাঈম ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ছেলে ধর্ষণের পর তাঁর শ্যালিকাকে হত্যা করেছে—এমন খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। শনিবার সকালে নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে ভোরে সদর উপজেলার অষ্টগ্রাম থেকে পুলিশ ওই যুবককে আটক করে।

ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত যুবকের নাম নাঈম ইসলাম (২৭)। তাঁর বাবার নাম বসু মিয়া। বাবা–ছেলে দুজন জেলা শহরের সড়ক বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নাঈম পুলিশের কাছে তাঁর শ্যালিকা তামান্না আক্তারকে (১৫) ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গত বুধবার (১৯ জুন) সদর উপজেলার নাটাই (দক্ষিণ) ইউনিয়নের শালগাঁও গ্রামে নাঈমদের বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনা ঘটে। নিহত তামান্না স্থানীয় শালগাঁও কালিসীমা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নাঈম পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ধর্ষণের সময় ওই কিশোরী চিৎকার করেছিল। আবার সে ঘটনাটি ফাঁসও করে দিতে পারে—এ ভাবনায় নাঈম তাঁর শ্যালিকাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরের দিন সকালে তাঁর স্ত্রী স্মৃতি আক্তার হত্যার বিষয়টি টের পেলে নাঈম গাঁ ঢাকা দেন।

জেলার নবীনগর থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ জানান, নাঈমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছেলের ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার ভয়ে বসু মিয়া বাড়ি ছেড়ে গোসাইপুর গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘটনাটি নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন। এই চিন্তা থেকে তিনি ওই আত্মীয়ের বাড়ির পাশের একটি গাছের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ বসু মিয়ার লাশ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়।

নিহতের বড় বোন ও নাঈমের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী একাধিক বিয়ে করেছে। তামান্নাকে বাবার বাড়ি পাঠাতে চাইলেও সে দেয়নি। আমি এই স্বামীর ভাত খাইতাম না। স্বামী জুসের সঙ্গে অজ্ঞান হওয়ার ওষুধ মিশিয়ে আমাকে খাইয়েছে। স্বামীই আমার বোনকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। আমি তাঁর ফাঁসি চাই।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে নাঈমের সঙ্গে স্মৃতি আক্তারের বিয়ে হয়। গত ১৭ মে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় তামান্না। এরপর গত বুধবার রাতে শ্বশুর বসু মিয়া সড়কবাজারে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে যান। নাঈমেরও নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করা কথা ছিল। কিন্তু তিনি যাননি। ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিন বছরের কন্যা জান্নাত ও স্ত্রীকে আমের জুস খাওয়ান নাঈম। ওই জুস খাওয়ার পর স্মৃতি ও জান্নাত অচেতন হয়ে পড়ে। পরে শ্যালিকা তামান্নাকে ধর্ষণ করে নাঈম।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় তামান্না চিৎকার শুরু করে। এ সময় তাঁকে গলাটিপে হত্যা করে নাঈম। পরদিন সকালে স্মৃতি আক্তার স্থানীয়দের ডেকে আনতে গেলে নাঈম পালিয়ে যায়। ওই দিনই পুলিশ তামান্নার লাশ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের সময় নিহতের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম বলেন, নাঈমকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহত কিশোরীর বাবা নোয়াব মিয়া মামলা দায়েরর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।