'সিপিডি বাজেট নিয়ে একই বক্তব্য দেয়'

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচক ও বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারদলীয় একাধিক সাংসদ। 

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা সমালোচনামুখর হন।
তবে আর্থিক খাতের দুরবস্থার সমালোচনা করে ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করার দাবি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।

সমালোচকদের সমালোচনা
বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি ও বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সিপিডি ২০১০ সাল থেকে বাজেটের পর প্রতিবছর একই বক্তব্য দেয়। সিপিডির বক্তব্য বর্ষায় ব্যাঙের ডাকের মতো। এই ব্যাঙ অথই পানিতে অসহায় হয়ে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। সিপিডি অসহায়। কারণ আর কখনো এক এগারোর মতো সরকার বা পাঁচ বছর পর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, তারা বিতর্ক ও সমালোচনা চান। কিন্তু তা হতে হবে বাস্তবসম্মত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ হয়েছে। গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ভুল প্রতিবেদন করার কারণে ১৬৭ বছরের পুরোনো পত্রিকা নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে ভুল অসত্য নিউজের কারণে কোনো পত্রিকা বন্ধ হয়নি।
বাজেটের সমালোচকদের সমালোচনা করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাজেটের ওপর যারা গবেষণা করেন তারা বাজেটকে সমালোচনা করে জন বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই মানুষগুলো অপেক্ষায় থাকেন কখন বাজেট পেশ করা হবে। কখন এটার সমালোচনা করবে। এরা অতিথি পাখির মতন। অথচ ওয়ান ইলেভেনের সময় ঘরের মধ্যে বসে যখন বাজেট দেওয়া হয়েছিল তখন তাঁরা সেই বাজেটের প্রশংসা করেছিলেন। দুর্ভাগ্য যে তারা নিজেদের সুশীল হিসেবে দাবি করেন।
বিএনপির সমালোচনা করে খালিদ মাহমুদ বলেন, তারা নাকে খত দিয়ে এই সংসদে যোগ দিয়েছে। তারা মুখে এক কথা বলে ভেতরটা আরেক। তাদের ডাবল স্টান্ডার্ড রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি
জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংক খাত এবং পুঁজিবারের অবস্থা খারাপ। একটি শ্রেণি ষড়যন্ত্র করে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। ব্যাংক খাত সংস্কার করতে দ্রুত ব্যাংক কমিশন করতে হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলেননি।রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয় কম। সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি ও ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়ছে না। মানুষ সুশাসন দেখতে চায়। বিনিয়োগে নানা ধরনের সমস্যা আছে। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
তবে সরকারি দলের সদস্য আহসানুল ইসলাম মনে করেন অর্থমন্ত্রী যেসব উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে খেলাপি ঋণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিএনপির আমল থেকে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় খেলাপি ঋণের চর্চা শুরু হয়। ১৯৯২ সালে বিএনপির আমলে ডান্ডি ডাইংকে ঋণ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে তাদের ১২ কোটি ১৬ লাখ সুদ মওকুফ করা হয়। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি সে আমল থেকে শুরু হয়েছে।

বিএনপির সমালোচনা
আওয়ামী লীগের সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস বিএনপির সাংসদদের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির সাংসদেরা আবোল-তাবল কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। তাঁরা এই সংসদে অশ্লীল গালিগালাজ করতেন। এখন সে দিন শেষ। সংসদে যা খুশি তা বলা যাবে না। ‘ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের’ দুটি জায়গা গুলশান আর নয়াপল্টনে হাত পা ছুটিয়ে যা খুশি বলতে পারেন, কিন্তু সংসদে সংবিধান, সংসদীয় রীতি নীতি নিয়ে কথা বলতে হবে।
সরকারি দলের সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক বলেন, বিএনপির একজন সাংসদ শপথ নিয়ে সংসদকে অবৈধ বলেছেন। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন অথবা তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও বক্তব্য
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাজেটের আকার ৯ গুণ বেড়েছে। মাথাপিছু আয় চারগুণের বেশি বেড়েছে। প্রতিবছর জিডিপি বাড়ছে। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে জিডিপি দুই অঙ্কের ঘরে যাবে। এসব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, দক্ষতা ও দূরদর্শিতায়।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর প্রথম আলো পত্রিকা পড়ুন। ঢাকার নির্বাচন সম্পর্কে একটি আর্টিকেল লিখেছিল, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে ছলচাতুরী করে না।
সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সুবর্ণা মুস্তফা বলেন, শিল্পী এখনো এ দেশে কোনো স্বীকৃত পেশা নয়। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানো, শিল্পীদের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ১০ শতাংশ না করে ৩ শতাংশ করা এবং মূসক প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
এ কে এম সারোয়ার জাহান স্ত্রী কর্তৃক নিগৃহীত স্বামীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখেন। তাঁর এই প্রস্তাব শুনে সাংসদদের অনেকে হেসে উঠলে তিনি বলেন, এখানে হাসার কিছু নেই।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, এম এ মতিন, হাসান ইমাম খান, শামসুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।