শাকিব হত্যায় তিনজনের স্বীকারোক্তি

গ্রেপ্তার তিন আসামি শাহীন, মঞ্জুরুল ও ফরহাদ। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তিন আসামি শাহীন, মঞ্জুরুল ও ফরহাদ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় রায়হান হোসেন শাকিব (১৯) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাঁরা এই জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তিন আসামি হলেন দক্ষিণখানের কোর্টবাড়ী ফয়দাবাদের আবুল মান্নানের ছেলে শাহীন মিয়া (২৪), জামালপুরের বকশিগঞ্জের পুরোনো বাঁশকান্দা গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলাম (২৪) ও দক্ষিণখানের ফয়দাবাদের ফরহাদ হোসেন (২৬)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরখান থানার পরিদর্শক নাসির উদ্দিন শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, শাকিব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আসামিরা।

এর আগে ১৯ জুন আসামি শাহীন, মঞ্জুরুল ও ফরহাদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে উত্তরখান থানার পুলিশ। আদালত শুনানি নিয়ে প্রত্যেক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

১৫ জুন বিকেলে উত্তরখান এলাকায় নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে খুন হন শাকিব। ওই ঘটনায় তাঁর বন্ধু শিপন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় নিহত শাকিবের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর শাকিব হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১। উত্তরখানের বাটুলিয়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। শাকিব হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছোরার পাশাপাশি তিনটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ১৮ জুন র‍্যাব বলে, ছিনতাইয়ের জন্য সাকিব ও রুবেলের ওপর হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন আসামি শাহীন।

র‍্যাব এবং পুলিশ সূত্র বলছে, ছোট থাকতেই মাকে হারান রায়হান হোসেন শাকিব। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের বাবা রফিকুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রি। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তিনি বেকার। এসএসসির পাস করার পর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে ‘ফড়িং’ নামে একটি পোশাক বিক্রির শোরুমে কাজ নেন শাকিব। ১৫ জুন বিকেলে বন্ধু শিপন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরখান এলাকায় নদীর পাড়ে বেড়াতে যান। এ সময় সাত থেকে আটজন যুবক তাঁদের ঘিরে ধরেন। দুজনের বুকে ও পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মোবাইল ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাকিব।

পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তার তিন আসামির কারও সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। বখাটে যুবক হিসেবে পরিচিত।

র‍্যাব জানায়, ছিনতাইয়ের জন্য শাকিব ও শিপনের ওপর হামলা চালানো হয়। শাহীন ২০১৫ সালে টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে এসএসসি পাস করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে আসছেন। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। শাহীনের বিরুদ্ধে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানায় ছিনতাই, মারামারি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করছিলেন শাহীন, জিয়া, তানভীর, রুবেল, মিঠু, সবুজসহ সাত থেকে আটজন। এ সময় সাকিব ও শিপনকে দেখতে পান মিঠু। এরপর ছিনতাইয়ের উদ্দেশে সবাইকে নিয়ে সাকিব ও শিপনের সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া শুরু করেন তাঁরা। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে শাকিব ও শিপনের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিতে চান। এতে তাঁরা বাধা দিলে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। এ সময় রুবেলের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার ছুরি নিয়ে শাকিব ও শিপনকে আঘাত করে পালিয়ে যান শাহীন।

তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, রুবেলসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।