'অজানা সমাধির' পাশে রান্না, ক্রিকেট খেলা

‘অজানা সমাধি’ প্রাঙ্গণে চলছে রান্নাবান্না। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
‘অজানা সমাধি’ প্রাঙ্গণে চলছে রান্নাবান্না। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে। ছবি: প্রথম আলো

দুপাশে সুউচ্চ ভবন আর সামনে–পেছনে গ্রিলের বেষ্টনী। সমাধির সামনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঝোলানো সাইনবোর্ডে সতর্কবার্তা। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে সেখানে লাকড়ির চুলায় বড় দুই পাতিলে চলছে খাবার রান্নার কাজ।

১৪ জুন মোহাম্মদপুরের ‘অজানা সমাধি’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, লোহার বেষ্টনী, কিছু নির্দেশনা দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়দায়িত্ব যেন শেষ। ‘অজানা সমাধির’ দেখাশোনার যেন কেউ নেই!

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শিয়া মসজিদের দিকে কিছুদূর যেতেই এই ‘অজানা সমাধির’ অবস্থান। সমাধিটি কার সেই তথ্যটা অজানা, তাই এমন নামকরণ। এই সমাধিতে শায়েস্তা খাঁর কোনো এক মেয়ের সমাধি বলে ধারণা করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ডেও এ বিষয়ে লেখা আছে।

সমাধির সামনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঝোলানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এই সমাধি সাতগম্বুজ মসজিদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থানীয় ও প্রচলিত লোকজনের তথ্য অনুযায়ী, এর ভেতর নবাব শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি রয়েছে। সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা, ‘কোন ব্যক্তি এই পুরাকীর্তির কোন রকম ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে..., ১৯৬৮ সালের ১৪ নম্বর পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারার অধীনে তিনি সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।’

তবে ১৪ জুন শুক্রবার অজানা সমাধি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সমাধির সীমানা ফটক ও সমাধির ফটক—দুটোই খোলা। সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এলাকার ভেতরে সমাধির পাশ ঘেঁষেই চলছে রান্নার কাজ। পাশাপাশি চলছে হাঁড়ি–পাতিল, বাসন–কোসন ধোয়ামোছার কাজ। রান্নার কাজে আনা লাকড়ি পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। ধোঁয়া ঢুকছে সমাধির ভেতরে। জানতে চাইলে রান্নার দায়িত্বে থাকা লোকজন বলেন, তাঁরা তবারক রান্না করছেন।স্থানীয় লোকজন বলেন, সংরক্ষিত এই পুরাকীর্তি এলাকায় এখন প্রায় সময়ই এভাবে রান্না করে সাধারণ মানুষকে তবারক খাওয়ানো হয়।

কাঁটাসুরের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, মাসে কয়েকবার, এমনকি কোনো কোনো সপ্তাহে দুবারও রান্নার কাজ চলে। টাকা কে দেয়, স্থানীয় ব্যক্তিরা কেউ জানেন না। এভাবে চলতে থাকলে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটাও একদিন হয়তো কারও দখলে চলে যাবে।

>

‘অজানা সমাধি’ প্রাঙ্গণে চলে রান্নাবান্না
চলে ক্রিকেট খেলাও
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এখানে নেশাখোরদের আনাগোনাও দেখা যায়

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, প্রায় সময় এখানে নেশাখোরদের আনাগোনা দেখা যায়।

গত শুক্রবার (২১ জুন) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কিশোর সমাধি এলাকার ভেতরে ক্রিকেট খেলছে। বল গিয়ে লাগছে সমাধির দেয়ালে। খেলার ফাঁকে কিশোরেরা গ্রিল ধরে ঝুলছে। কেউ ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে গ্রিলে আঘাত করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঐতিহাসিক এই নিদর্শন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে না প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এতে অনেকে সংরক্ষিত এলাকায় আঙিনা ব্যবহার করে নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জানায়, অধিদপ্তরের যে কর্মচারী সাতগম্বুজ মসজিদ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন, তাঁর অজানা সমাধিও দেখার কথা।

তবে ১৪ ও ২১ জুন সমাধি এলাকায় অধিদপ্তরের কোনো কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের কেউ তাঁর কোনো খবর দিতে পারেননি।

অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরে তদারককারী কর্মচারীর নাম মো. বাশার বলে জানা যায়। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাইরের ফটক সাধারণত দিনে খোলা রাখা হয়। সমাধির ফটক সব সময় বন্ধ থাকে। তবে কোনো দর্শনার্থী দেখতে চাইলে সমাধির ফটক খুলে দেওয়া হয়। সীমানা ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয় সন্ধ্যা ছয়টার পর।

সমাধি প্রাঙ্গণে রান্না করে তবারক খাওয়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক রাখী রায় বলেন, সমাধি প্রাঙ্গণে রান্না করা নিষেধ। অধিদপ্তরের অগোচরে এই কাজ কেউ হয়তো করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।