শৈলকুপায় ঘুষের টাকা ফেরত

ঝিনাইদহে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘুষের টাকা ফেরত নিচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।  প্রথম আলো
ঝিনাইদহে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘুষের টাকা ফেরত নিচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। প্রথম আলো

বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১২৬ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ টাকা নিয়েছিলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক পরিচালক। এই ঘটনা দুই বছর আগের। দুই বছর পরও বিদ্যুৎ-সংযোগ না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রভাবশালী ওই পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছিলেন না।

একপর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওই পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলেন। সে অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার লাইনে দাঁড় করিয়ে ওই ব্যক্তিদের টাকা ফেরত দেন পরিচালক। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন খুলুমবাড়িয়া গ্রামের।

বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মো. নুরুজ্জামান। তিনি ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৭ নম্বর এলাকার পরিচালক। আর গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন।

 খুলুমবাড়িয়া গ্রামের কামাল উদ্দিন জানান, তাঁরা জানতেন তাঁদের পাশের গ্রাম হাকিমপুরের মো. নুরুজ্জামান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন পরিচালক। তাই তাঁরা তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়ার বিষয়ে নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন। নুরুজ্জামান তাঁদের বলেন, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি (পিলার) নেই। এগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। এ জন্য যাঁরা বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে চান, তাঁদের প্রত্যেককে ৮ হাজার টাকা করে দিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যে যা পারবেন তা তাঁর কাছে জমা দেবেন। এই কথায় তিনি নুরুজ্জামানের হাতে ৪ হাজার টাকা দেন। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি পিলার দিতে পারেননি। ফলে তাঁরা বিদ্যুৎ-সংযোগ পাননি।

একই গ্রামের বাবর আলী জানান, তিনি নতুন মিটারের জন্য ৭০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছরেও নতুন মিটার দিতে পারেননি। এসব ব্যাপারে নুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব সময় আশা শুনিয়েছেন। বলেছেন, এই তোমাদের জন্য নতুন মিটার এসে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, নুরুজ্জামান এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। শুধু তাঁর কথা শুনে অপেক্ষায় থেকেছেন। জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রেশমা খাতুন জানান, তাঁরা পিলারের জন্য ২ হাজার টাকা দেন। তাঁরা সবাই বৃহস্পতিবার এই টাকা ফেরত পেয়েছেন।

এই বিষয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে খবর আসে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খুলুমবাড়িয়া এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি করা হচ্ছে। সেখানে সমিতির নির্বাচিত এক পরিচালক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নতুন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। খবর পেয়ে তিনি পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা পরিচয়ে নন, সাধারণ মানুষ হয়ে ওই এলাকায় যান। সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি জানতে চান। কিন্তু প্রথমে তাঁরা সবকিছু প্রকাশ করেত সাহস পাননি। পরে সাহস দেওয়া হলে তাঁরা সবকিছু খুলে বলেন। সাধারণ গ্রাহকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়ার জন্য তাঁরা ৩০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত নুরুজ্জামানকে দিয়েছিলেন।

আলতাফ হোসেন আরও জানান, দুর্নীতি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন। এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। অবশেষে তিনি টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। বৃহস্পতিবার সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন। যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের আগে থেকেই খুলুমবাড়িয়া বাজারে অপেক্ষা করতে বলা হয়। এরপর তিনিসহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। ওই সময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে সবার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এভাবে ১২৬ জনের হাতে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক নুরুজ্জামান জানান, তিনি জমার টাকা নিয়েছিলেন। টাকাগুলো তাঁর কাছে রাখা ছিল। এখন সেই টাকা যাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ফেরত দিয়ে দিলেন। তিনি দাবি করেন, বেশি অঙ্কের টাকা কারও কাছ থেকে তিনি নেননি। তিনি আসলে মানুষের জন্য কাজ করেন এবং ছুটে বেড়ান। আর এগুলো করতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন।