এলিয়েন এল নগরে!

ওয়াসার পানির ট্যাংকটিকে ভিনগ্রহবাসীদের নভোযানের আদলে রূপান্তর করা হয়েছে।
ওয়াসার পানির ট্যাংকটিকে ভিনগ্রহবাসীদের নভোযানের আদলে রূপান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা শহরে এসেছে এলিয়েন! ভিনগ্রহ থেকে এক ইয়া বড় নভোযানে করে এসে নেমেছে চার শ বছরের পুরোনো বাংলার এই রাজধানী শহরে। গুলশান–২–এর মোড়ের কাছে সেই নভোযানের জানালা খুলে উঁকি দিচ্ছে তিন সবুজ ভিনগ্রহবাসী। ইতিমধ্যে হয়তো অনেকই এই এলিয়েনদের দেখেও ফেলেছেন। যাদের চোখ এড়িয়ে গেছে, তারা যদি গুলশান-২–এর চৌরাস্তা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে তাকান, তবে নারকেল বীথির ফাঁক দিয়ে দেখতে পাবেন এই এলিয়েনদের নভোযানটি। সেখানে ওয়াসার বিবর্ণ হয়ে পড়া যে পানির ট্যাংকটি ছিল, সেটিই বদলে গেছে ঝকঝকে ভিনগ্রহবাসীর নভোযানে।

ঢাকা ওয়াসার পুরোনো দিনের পানির ট্যাংকগুলো এখন আর ব্যবহৃত হয় না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় লম্বা খুঁটির ওপরে বৃত্তাকারের এই জলাধারগুলো এখন খালিই পড়ে আছে। এককালে হলুদ রং ছিল তার গায়ে। পরিচর্যার অভাবে এখন ধুলো-ময়লা আর শেওলা জন্মে হতশ্রী। গুলশানের এই ট্যাংককে সাফসুতরো করে অনেকটা নভোযানের আদলে চিত্রায়িত করেছেন তরুণ স্থপতি সালজার রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানালেন, খুব ছোটবেলা থেকেই লম্বা খুঁটির মাথায় অতিকায় এই পানির ট্যাংকগুলোকে তার ‘স্পেসশিপ’ বলে মনে হতো। সুযোগ পেয়ে মনের সেই কল্পনাকে তিনি রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন।

সালজার রহমান ও তাঁর বন্ধুরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে অধ্যয়ন শেষে ‘বাঙ্গি’ নামের একটি ডিজাইন স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। তাঁরা ভবনের স্থাপত্য নকশা, ঘরবাড়ির অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। ব্যক্তিগতভাবে সালজার চিত্রকলার চর্চারও করেন। ঢাকা আর্ট সামিটসহ বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। কিছু পথচিত্রও করেছেন। তিনি জানালেন, অব্যবহৃত পানির ট্যাংকটি রঙে নকশায় নভোযানের আদলে ফুটিয়ে তুলতে বাঙ্গি স্টুডিও, ঢাকা ওয়াসা আর মোবাইলভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকাশ কাজ করেছে একসঙ্গে। গত বছরের ডিসেম্বরে অঙ্কনের কাজ শুরু হয়েছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বা প্রচারমূলক কোনো আয়োজন করা হয়নি। মূলত শহরের দৃশ্যপটে নান্দনিক করে তুলতেই তাঁদের এ উদ্যোগ।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন ভবনের দেয়াল, বড় আকারের স্থাপনা, হরেক রকমের পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে। কুৎসিত লাগে। অথচ দেয়ালগুলো পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন দৃশ্যে রঙে রাঙিয়ে শহরের দৃশ্যপটকে নান্দনিক করে তোলা যায়। বাঙ্গি স্টুডিওর তরুণ এ উদ্যোক্তারা তাঁদের সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করছেন। তাঁরা জানালেন, বিকাশের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে। আর্থিক সহায়তা পেলে তাঁরা নগরীর বিবর্ণ স্থাপনা, দেয়াল, প্রাচীরসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা রকমের দৃশ্য আঁকবেন বা রূপান্তর করবেন।

পুরোনো স্থাপনার নান্দনিক রূপান্তরের এ উদ্যোগ ছোট হতে পারে, তবে ময়লা-আবর্জনা আর অযত্ন-অবহেলায় ক্রমেই কদর্য হতে থাকা ঢাকা শহরকে রঙে-রূপে লাবণ্যময় করে তোলার এমন ছোট ছোট প্রয়াস যদি অনেকে নেন, অব্যাহত রাখেন; তবে নিঃসন্দেহে একদিন এই ঢাকাই হয়ে উঠবে এক চোখজুড়ানো দর্শনীয় শহর।