জমিসংক্রান্ত বিরোধে হত্যা, দেড় দশক পরে ২ ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ

জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডের মামলায় দুই প্রধান আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ। একই মামলায় অপর ১৭ জন আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার প্রায় দেড় দশক পর মামলার রায় প্রদান করেন দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল হক।

হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ পাওয়া দুজন হলেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রতনৌর গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং মো. শরিফুল ইসলাম। অপর ১৭ আসামির মধ্যে মামলার ৫ নম্বর আসামি মতিউর রহমান মঙ্গলু এবং ১৪ নম্বর আসামি আকলিমা খাতুন পলাতক।

আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামি দুজনের প্রত্যেকের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে উক্ত শাস্তি কার্যকর করা হবে। তবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি দুজন রায়ের পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

আদালতের রায়ে মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৪ শতক জমি নিয়ে মামলার বাদী বিরলের নোনাগ্রামের মাহাতাবউদ্দিনের ছেলে মো. আবদুল বাকীর সঙ্গে একই উপজেলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম ও শরিফুল ইসলামের বিরোধ চলছিল। মামলার বাদী মো. আবদুল বাকী বিরল থানা সহকারী জজ আদালতে মামলা করে ওই সম্পত্তিতে ডিক্রিপ্রাপ্ত হন। ২০০৪ সালের ২৯ অক্টোবর সেই জমি দখলে নিতে আদালতের প্রেরিত পেয়াদাসহ মামলার বাদী আবদুল বাকী ও তাঁর ভাইয়েরা জমিতে যান। সেই সময় আসামি জাহাঙ্গীর আলম ও শরীফুল ইসলাম তাঁদের লোকজনসহ আবদুল বাকী ও তার ভাইদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেন। এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন আবদুল বাকীর ছোট ভাই আবদুল বারী। ঘটনার পর দিন আবদুল বারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিনাজপুর সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। পরে আবদুল বাকী বাদী হয়ে বিরল থানায় ওই বছরের ৩১ অক্টোবর হত্যা মামলা করেন।

আবদুল বাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করি আসামি তার উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছে। আমরা অবিলম্বে মামলার রায় কার্যকর করার জন্য মহামান্য আদালতের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. হাসনে ইমাম নয়ন বলেন, ‘মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর এ হত্যা মামলার যে রায় আজ হলো, তাতে করে স্পষ্টত প্রমাণিত হয় বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। অপরাধী যে-ই হোক, আইন সবার জন্য সমান। আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।’

আসামিপক্ষে আদালতে ছিলেন তিনজন আইনজীবী। তাঁদের পক্ষে মাজহারুল ইসলাম সরকার মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রায়ে আমার মক্কেল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’