বগুড়া-৬ নির্বাচন: ভোটের পরিবেশ নিয়ে তুষ্ট বিএনপি-আ.লীগ উভয়ই

বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের একটি কক্ষে ভোটের সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের একটি কক্ষে ভোটের সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া-৬ আসনে প্রথমবারের মতো কাল সোমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন সুষ্ঠু ভোট চান প্রার্থীরা। তাঁদের প্রত্যাশা, উৎসবমুখর ভোট হোক। জয়ের প্রত্যাশাও রয়েছে একাধিক প্রার্থীর। তবে ভোটাররা বলছেন, ভোটে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যেই।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া-৬ আসন। গত নির্বাচনে জয়ী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮। কেন্দ্র রয়েছে ১৪১ টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯৬৫। ইভিএমে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে।

এ আসনে নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকেতা (নৌকা), বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম (লাঙ্গল), মুসলিম লীগের রফিকুল ইসলাম (হারিকেন), বাংলাদেশের কংগ্রেসের মনসুর রহমান (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মিনহাজ (আপেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বগুড়া সদর আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য ‘সংরক্ষিত’ আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি দখলে ছিল বিএনপির। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম এ আসনে সাংসদ হন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোটে নির্বাচনের মহড়া ও প্রশিক্ষণ বাবদ অন্তত ৪২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নির্বাচনে ৩ হাজার ৩৬ জন প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা রয়েছেন।

কমিশনের সব আয়োজন ঠিক রয়েছে। তবে ভোটারদের ভোটদানের আগ্রহ নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত শনিবার শহরতলির দ্বিতীয় বাইপাস এলাকায় বরার মোড়ে কথা হয় মো. ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট দিয়ে কী হবে? ধানের দাম বাড়বে?’ যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তবে গেলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই তিনি ভোট দেবেন।

সাবগ্রাম ইউনিয়নের চকঝুপু গ্রামের বাসিন্দা নির্মাণশ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, এখন আর ভোট দেওয়া লাগে না। এমনিই সাংসদ হওয়া যায়। ভোট দিতে গিয়ে একদিন সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই তাঁরা।

শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ইভিএম নিয়ে শঙ্কা আছে। আগের নির্বাচনগুলোতে মিডিয়ার মাধ্যমে শোনা গেছে, এখানেও ভোট চুরি করার সুযোগ রয়েছে। তবে এখানে স্বচ্ছভাবে ভোট হলে ভবিষ্যতে ভোটার আগ্রহী হবেন।

তবে ভোটাররা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি যা-ই হোক, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে।

ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মো. সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। সবই সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ‍বিগত ভোটে সরকারের সদিচ্ছা ছিল না। এবার এখন পর্যন্ত পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে আছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ভোট সুষ্ঠু হবে। তবে ভোটের আগেই ইভিএম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিরাজ।

সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রশাসন ভালো আছে। একসময় এখানে বিএনপির আধিপত্য ছিল। কিন্তু বিগত দিনে সাংসদ ছিলাম। উন্নয়ন করেছি। মানুষ মার্কা প্রেমে ব্যস্ত কি না, তা ভোটের দিনে দেখা যাবে। এর জন্য ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী টি জামান নিকেতার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের বিষয়ে বিবেচনা করলে নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও মানুষ ভোট দেওয়ার কথা নয়। সাধারণ ভোটারও বুঝতে পেরেছেন উন্নয়ন করতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আর অতিথি কোনো প্রার্থীকে (জি এম সিরাজের বাড়ি শেরপুর উপজেলায়) ভোট দিতে চায় না বগুড়া সদরের মানুষ। উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দেবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ বলেন, জনগণের মধ্যে উৎসাহ ভাব দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসক এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। ইভিএম দেশের বাইরে অনেক জায়গায় কার্যকর রয়েছে। বগুড়ার উন্নয়নে তাঁকে অনেক মানুষ ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বিজিবির টহল। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বিজিবির টহল। ছবি: সোয়েল রানা

ভোটের ১৪১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩০টিকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার পুলিশ, ৪০০ বিজিবি সদস্য, র‌্যাবের ৪৫০ সদস্য এবং ১ হাজার ৭০০ আনসার। ১৪১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়াও ২৫ জন নির্বাহী হাকিমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে ভোটের দিন সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাজ করবেন।

জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত তৎপর। প্রচারণার শুরু থেকে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ভোট ভালো হবে।

বগুড়া সদরের নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহড়া বা প্রশিক্ষণে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। তবে মানুষ ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন। আশা করা যায়, এবারের ভোটে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।