বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদেরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের যত অর্জন, সব এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা এসব কথা বলেন। আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সংসদে বাজেট আলোচনায়ও ছিল এর ছাপ।
বক্তব্যে আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস ও অবদান এবং স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিচক্ষণ নেতা। তাঁর মতো বিচক্ষণ নেতা পৃথিবীতে আর আসবে না। তাঁর হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাকি কাজ বাস্তবায়ন করছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়, আওয়ামী লীগ কর্মীর দল।

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চমৎকার বাজেট হয়েছে। তবে কিছু কিছু অসামঞ্জস্য আছে। তিনি আশা করেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।
তবে বাজেটে কী কী অসামঞ্জস্য আছে, তা তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেননি।

আওয়ামী লীগের আরেক জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা। সিরাজুল আলম খানের স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস তত্ত্বের সমালোচনা করেন শেখ সেলিম। সিরাজুল আলম খানের নাম উল্লেখ না করে শেখ সেলিম বলেন, ‘অনেকে নিউক্লিয়াস বলেন, কী কী বলেন, ৬২ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলার স্বাধীনতার জন্য একটি বিপ্লবী সংগঠন করেন। আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন। প্রত্যেক মহকুমার কিছু কিছু ছেলে ও লোককে রিক্রুট করেন গোপনে। ওটাকে নিয়ে বলে আমি নিউক্লিয়াস, আরে বঙ্গবন্ধু বাদে কেউ কথা বললে তো গণপিটুনিতে মারা যেত। তাদের কোনো ক্ষমতা ছিল কিছু করার। তারা কারা? এখন বই লিখে কত ইতিহাস বানায়।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন শেখ সেলিম। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এর প্রমাণ আছে।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে স্বাধীনতার আগে-পরে বাংলাদেশের যত অর্জন, সব আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা মুক্তির সনদে পরিণত হয়েছিল। ছয় দফার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু এ দেশের একক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুতের সংযোগের ক্ষেত্রে সবার জন্য টিআইএন (আয়কর সনদ) বাধ্যতামূলক না করে যাঁরা ৫০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুতের সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক ৪০ ইউনিটেরও কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এঁদের বিদ্যুতের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হলে করের ফাইল করতে হবে। তিনি প্রস্তাব রাখেন, সবার জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক না করে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করা এবং যাঁরা ৫০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
গণফোরামের সাংসদ সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ দাবি করেন, তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়েননি বা আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করেনি। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে তাঁর সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এ কারণেই বিএনপির বাকি সদস্যরা শপথ নিয়েছেন।
সুলতান মনসুর অভিযোগ করেন, একটি কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে ঠেলে দিয়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগকে সুসংহত করার পাশাপাশি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সুলতান মনসুর বলেন, যাঁরা পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গাছের আগেরটা খেতেন, তলেরটাও খেতেন, তাঁরা আজকে সংসদেও আছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরচারদের যাঁরা সমর্থন করতেন, তাঁরাও আছেন, ওয়ান-ইলেভেনে যাঁরা সুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা আজকে সংসদে আছেন। এদের সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকে টাকা পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক হতে হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অনেকে বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী। তা ঠিক, উচ্চাভিলাষী না হলে স্বাধীনতা আসত না।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুবিধা দিয়ে ধনীদের জন্য মহাসুযোগ করে দেওয়া হলো। তিনি বলেন, সরকার ঋণখেলাপিদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বড় ঋণখেলাপিদের নাম নেই। তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে চুপ করে বসে থাকে। তাঁদের নাম আসে না। সরকার যেহেতু তালিকা প্রকাশ করেছে, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব দেন।
আর সরকারি দলের আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব, সবার জন্য ভালো বাজেট। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখাকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আবাসন খাতে বিশেষ সুযোগ দেওয়া ইতিবাচক। টাকা অলস রেখে উন্নয়ন করা যাবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বলেন, গুটিকতক মহল বাজেটের সমালোচনা করছে। তিনি বলেন, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ঋণ নেওয়ায় ব্যাংকে তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহারে কর না বাড়ানোর দাবি জানান।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আফছারুল আমিন, নজরুল ইসলাম, ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক, কাজী নাবিল আহমেদ, সংরক্ষিত নারী সাংসদ আদিবা আঞ্জুম প্রমুখ বক্তব্য দেন।