ডিবিতে দোষী, থানায় নির্দোষ

জব্দ ইয়াবা বড়ি। ফাইল ছবি
জব্দ ইয়াবা বড়ি। ফাইল ছবি

মো. রিদোয়ান ওরফে জুবায়ের একজন আন্তর্জাতিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। ১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় ছয় মাস আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে এই তথ্য রয়েছে। অথচ গত মাসে বায়েজিদ থানা-পুলিশের আরেকটি ইয়াবা উদ্ধারের মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক সুবিধা নিয়ে নামটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রিদোয়ান গত মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিমের অন্যতম সহযোগী। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে তাঁদের জন্য ইয়াবার চালান পাঠাতেন সেখানকার বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। মাদক মামলায় বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন রিদোয়ান। তালিকাভুক্ত এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় এটি অধিকতর তদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। ডিবি পুলিশ তাঁর সম্পর্কে তথ্য পেলেও থানা-পুলিশ না পাওয়ার পেছনে রহস্য থাকতে পারে। এটিও বের করা উচিত।

ঘটনার শুরু গত বছরের ৬ অক্টোবর। ওই দিন নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কুয়াইশ-অক্সিজেন রোড এলাকা থেকে ৭ হাজার ৭৫০টি ইয়াবাসহ আবদুল গফুর নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বাড়ি উখিয়ার পালংখালীতে। এই ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ আহমেদ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। আসামি করা হয় গফুর ও মো. রিদোয়ানকে। এজাহারে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গফুর জানিয়েছেন, তিনি টেকনাফ থেকে কম দামে ইয়াবা সংগ্রহ করে রিদোয়ানের সাহায্যে চট্টগ্রামে বিক্রি করে থাকেন।

>

ছয় মাস আগে ডিবির অভিযোগপত্রে রিদোয়ানকে আন্তর্জাতিক ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়
গত মাসে বায়েজিদ থানার মামলায় অভিযোগপত্র থেকে রিদোয়ানের নাম বাদ যায়

ওই বছরের ৮ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিদোয়ানকে নগরের হালিশহর থানার একটি মামলায় (১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের মাসের ২ ডিসেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই উৎপল চক্রবর্তী রিদোয়ানকে ৭ হাজার ৭৫০টি ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার দেখান।

এদিকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ফরহাদ হোসেন গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রিদোয়ানসহ ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ওই বছরের ৩ মে নগরের হালিশহর থেকে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ আশরাফ আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনার মামলার অভিযোগপত্র এটি। এতে বলা হয়, আশরাফের জবানবন্দি অনুযায়ী এই ইয়াবার মালিক কক্সবাজারের সিআইপি সাইফুল করিম (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ও রিদোয়ান। ইয়াঙ্গুন থেকে তাঁদের জন্য ইয়াবার চালানটি পাঠান সেখানকার বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। আগে-পরে মিলে রিদোয়ানের কাছে রহিমের পাওনা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।

রিদোয়ান সম্পর্কে নগর ডিবি পুলিশ এত সব তথ্য পেলেও বায়েজিদ বোস্তামী থানার পুলিশ কিছুই জানে না। শুধু গফুরকে আসামি করে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, গ্রেপ্তারের ছয় দিন আগে-পরে গফুরের সঙ্গে রিদোয়ানের ফোনে কথা হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই উৎপল চক্রবর্তী বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় রিদোয়ানকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়নি।