বগুড়ায় ভোটার কম, পরিবেশ শান্ত

বগুড়া ৬ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রের সামনে দৃশ্য ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া ৬ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রের সামনে দৃশ্য ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনে আজ সকাল ৯টা থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রথম দুই ঘন্টায় শহর-গ্রামে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কোন কোন কেন্দ্রের বুথে প্রথম এক ঘন্টায় ভোট পড়েছে দুই থেকে তিনটি। উপস্থিতি কম থাকলেও ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট প্রার্থীরা।

সকাল নয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম আলোর তিনজন সাংবাদিক নির্বাচনী এলাকার সাতটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি কম পেয়েছেন। ভোটারেরা বলছেন, ইভিএম নিয়ে ভীতি-সংশয়ের কারণে অনেকেই ভোট কেন্দ্রে আসছেন না। তবে কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার পর ইভিএম নিয়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করতেও দেখা গেছে ভোটারদের।

সকল নয়টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও প্রথম একঘন্টায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল বগুড়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার অদূরে পিটিআই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সকাল ১০টা ৩ মিনিট পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৩ নম্বর কক্ষে ৩৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৩টি। ১০টা ৪ মিনিট পর্যন্ত ৫ নম্বর কক্ষে ৩৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩ জন। এক ঘন্টা ৫ মিনিটে ৮ নম্বর কক্ষে ৩৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫টি। কেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষে ভোটার সংখ্যা ৩৭৩ জন। এক ঘন্টা ১০ মিনিটে ভোট পড়েছে ৮টি। ১ নম্বর বুথে ৩৭৩ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৬টি। ২ নম্বর বুথে ৩৭৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪টি। ৪ নম্বর বুথে ৩৭৩ ভোটের মধ্যে একঘন্টা ১০মিনিটে পড়েছে ১০টি।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯৮৪। প্রথম একঘন্টায় ভোট পড়েছে ৩৯টি। নারী কেন্দ্র হওয়ায় দুপুরের পর ভোটার বাড়বে। একই চিত্র পিটিআই ইনষ্টিটিউট একাডেমিক ভবন কেন্দ্রেও। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৬৪৮টি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন,একঘন্টায় ভোট পড়েছে ১০৬টি। এরমধ্যে ৩ নম্বর বুথে ৩৭৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৭টি। ৪ নম্বর বুথে ৩৭৯ ভোটের মধ্যে একঘন্টায় পড়েছে ১২ ভোট। ২ নম্বর বুথে ৩৯৪ ভোটের মধ্যে পড়েছে ১১টি। ৩ নম্বর বুথে ৩৬৪ ভোটের মধ্যে প্রথম ঘন্টায় পড়েছে ১২টি।

ইভিএম ভোট দেওয়ার পর শহরের রহমাননগর এলাকার ভোটার মালিক আহমেদ আলী বলেন, ইভিএম নিয়ে কিছুটা সংশয় ও ভীতি ছিল। তবে ভোট দেওয়ার পর মনে হচ্ছে, জীবনে এই প্রথম স্বতফুর্তভাবে ভোট দিতে পারলাম। পছন্দের প্রতীকে ভোট পড়া আগে কখনো এভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কানুছগাড়ি এলাকার ভোটার জাহানারা বেগম বলেন, ইভিএমে ভোট চুরির ভয়, ভোট দিতে পারবো কীনা তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন না। তবে এখানে এসে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর মনে হচ্ছে ,ইভিএমে ভোট দেওয়া খুবই সহজ।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টহল দিচ্ছেন বিজিবির সদস্যরা । বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় । ছবি: সোয়েল রানা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টহল দিচ্ছেন বিজিবির সদস্যরা । বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় । ছবি: সোয়েল রানা

শহরের উপশহর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৪০টি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফিরোজ মিয়া বলেন, এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৮৮৮ ।
একই চিত্র শহরের বাইরের কেন্দ্র গুলোতেও। বগুড়া সদর উপজেলার বেলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল দশটা পর্যন্ত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৬টি বুথে ভোট পড়েছে ১৩৭টি। সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রথম দুই ঘন্টায় ভোট পড়েছে ২৭২টি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, কেন্দ্রে ভোট ভোটার ২ হাজার ৪৭৮টি।
সদর উপজেলার নুনগোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ৩ হাজার ৬০০। সকাল দশটা পর্যন্ত পড়েছে ১৯০টি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ছে।

সদর উপজেলার বুজর্গধামা ফাজিল মাদ্রাসা পুরুষ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৮১১। ১০টা ৩ মিনিট পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৫০টি। এরমধ্যে ৩ নম্বর কক্ষে ৪১০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২৯টি।
বুজর্গধামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭১৩। এঘন্টায় ভোট পড়েছে ১৪১টি। এরমধ্যে ৮ নম্বর বুথে প্রথম ঘন্টায় ৩৯১ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩টি।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভোট কেন্দ্রে সকাল দশটা পর্যন্ত প্রথম ঘন্টায় ২ হাজার ৮২৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১০০টি।
সকাল দশটায় পিটিআই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টি জামান নিকেতা প্রথম আলোকে বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব প্রার্থীর মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সর্ম্পক এবং সহাবস্থান ভোটের দিন পর্যন্ত অটুট রয়েছে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর খুশি ভোটারেরা। কয়দিন আগেই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভোটারেরা। বিএনপি শপথ না নেওয়ায় এই নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণে ভোটে মানুষের আগ্রহ কম। তবে মানুষের ভোটাধিকারকে অসম্মানের জবাব দিতেই অনেকেই ভোট দিতে আসছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী জি এম সিরাজ । বেলা ১১টার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। তাঁর আশা ভোটার উপস্থিতি সকালের দিকে কম হলেও দুপুরের পর তা বাড়বে।
সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক। ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর ভোটারেরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাজোট সমর্থিত জাতীয়পার্টির নুরুল ইসলাম ওমরকে প্রায় দেড় লাখ ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হন। শপথ না নেওয়ায় আসনটি শুন্য ঘোষণা করা হয়। এই আসনে ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮। ১৪১ টি কেন্দ্রে ৯৬৫টি কক্ষে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবারে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ছাড়াও মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি একচ্ছত্র দখলে ছিল বিএনপির। বিএনপিবিহীন ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম এ আসনে সাংসদ হন।

এবারের নির্বাচনে ১৪১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ১১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ছাড়াও আইনশৃংখ্লা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনী আইনশৃংখ্যলা রক্ষায় তাৎক্ষনিক বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় ২৫ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত রয়েছেন।