বাজেটে কর্মসংস্থানের দিকনির্দেশনা নেই, সভায় বক্তারা

ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (ডিবিএম ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা ।
ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (ডিবিএম ) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা ।

বাজেট হয় দেশের উন্নয়নের জন্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। কিন্তু সংসদে যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা হচ্ছে ধনী ও ব্যবসায়ীবান্ধব। এখানে শ্রমিকদের জন্য কিছু নেই। কৃষকের জন্য বরাদ্দ নেই। শিক্ষার উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। ঋণনির্ভর এই বাজেটের লক্ষ্য লুটেরাদের পকেট ভারী করা। বাজেটে কর্মসংস্থানের দিকনির্দেশনা নেই।

আজ সোমবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (ডিবিএম)। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন ডিবিএমের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।

মূল প্রবন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘দায়সারা গোছের’ ও ‘প্রথাবদ্ধ’ উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এখানে দেশের মূল সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। বৈষম্য কমানোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাজেট পেশের আগে জনগণের মতামত নেওয়া হয় না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। এমনকি সংসদীয় কমিটিগুলোতেও এ বিষয়ে মমতা চাওয়া হয় না । তাহলে বাজেট আসলে প্রণয়ন করে কে? বাজেটে ধনীদের জন্য সুবিধা দেওয়া হয়। এই নীতি মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাজেট হয়েছে লুটেরা শ্রেণির জন্য। সরকার উন্নয়নের নহর বইয়ে দিচ্ছে, ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান দিচ্ছে। আরেক দিকে কাজের খোঁজে সাগরে যুবকেরা জীবন দিচ্ছে। ঘরে বসে সমালোচনা করে লাভ নেই, পথে নামতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জেকুজ্জামান রতন বলেন, বাজেট হয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পমালিকদের স্বার্থে। এখানে শ্রমিকদের জন্য কিছু রাখা হয়নি। বাজেটের মূলমন্ত্র হচ্ছে ধনীরা আরও ধনী হবে, গরিবেরা আরও গরিব। এটা গরিব মারার বাজেট। ‘তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই বরাদ্দে তিন কোটি তরুণের জন্য কর্মসংস্থান কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার সঠিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা আবদুল্লাহ আল কাফী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ধনী, ব্যবসাবান্ধব বাজেট। এর ফলে জনগণের মধ্যে বৈষম্য বাড়বে। এ বাজেটে পোশাকমালিকদের জন্য প্রণোদনা রাখা হয়। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কিছু বলা হয় না। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা রাখার প্রশংসা করেন সিপিবির এই নেতা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাজেট বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাকি বলেন, বাজেটের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার চেয়ে ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। ১০০ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৬০ টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে। তাই সরকারের নীতিতে পরিবর্তন না এলে বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ নেই। সরকার প্রতিবছর লাগামহীনভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়াচ্ছে। এই বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর ভর করে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সংবিধানে অবৈধ উপার্জনের বিরোধিতা করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা সরকার বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে, এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী নয়?