সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা চান

মোয়াজ্জেম হোসেন
মোয়াজ্জেম হোসেন

কারাগারে থাকা ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।

কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করেন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। আজ সোমবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরে আদালত ওই নির্দেশ দেন।

মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আদালতের কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে তিনি বেতন পান। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় জেলকোড অনুযায়ী মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা পাওয়ার হকদার।

ফারুক আহম্মেদ আদালতের কাছে আরও দাবি করেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম এক সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। অনেক দাগি আসামি, মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছেন। তাঁদের অনেকের সাজা হয়েছে। যে কারণে কারাগারে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির বন্দীর সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দাবি রাখেন।

কারাগারে বিশেষ সুবিধা চেয়ে করা সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন ওই ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে তিনি বলেছেন—সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম বরখাস্ত হয়েছেন। যে কারণে তিনি কারাগারে বিশেষ কোনো সুবিধা পেতে পারেন না। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১৬ জুন গ্রেপ্তার হন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। পরদিন তাঁকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মোয়াজ্জেমের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেদিন মামলার বাদী সৈয়দ সাইয়েদুল হক আদালতকে বলেছিলেন, আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। তবে মোয়াজ্জেমকে নির্দোষ দাবি করেন তাঁর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। সেদিন থেকে কারাগারে আছেন মোয়াজ্জেম।

নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তাঁর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর ১০ দিন আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। তবে পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। তখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলেছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।