'রোহিঙ্গা' বলায় ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা শাহাদাত

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চন্দনাইশ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল আনোয়ার। এ মামলায় গতকাল সোমবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান শাহাদাত।

সম্প্রতি দলীয় ফোরামে নুরুল আনোয়ার নগর বিএনপি সভাপতির সমালোচনা করায় দুই নেতার মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বাড়ি ভাঙচুর ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন নুরুল আনোয়ার। এর আগে দুই নেতার মধ্যে মুঠোফোনে বাক্যবিনিময়ের সময় শাহাদাতকে ‘রোহিঙ্গা’ বলে কটাক্ষ করেন নুরুল।

চট্টগ্রাম বিএনপির দুই নেতার বিরোধে অস্বস্তিতে আছেন দলের নেতারা।

১৮ জুন সন্ধ্যায় চন্দনাইশ বিএনপির দ্বন্দ্ব মেটাতে একটি সভা ডাকা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান তাঁর বাসভবনে সভাটি ডাকেন। ওই সভায় শাহাদাত হোসেনের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন নুরুল আনোয়ার।

দলীয় সূত্র জানায়, পরদিন ১৯ জুন দুপুরে শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে নুরুল আনোয়ারকে ফোন দিয়ে সমালোচনা করার কারণ জানতে চান। এ সময় দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর জের ধরে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা নুরুল আনোয়ারের চান্দগাঁও এলাকার বাড়িতে যান। তাঁরা শাহাদাত হোসেনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে নুরুল আনোয়ারকে অনুরোধ জানান। এর মধ্যে নুরুল আনোয়ারের ছেলের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান একজন কর্মী। এর জের ধরে কিছু কর্মী নুরুল আনোয়ারের বাড়ির দরজায় আঘাত করেন। ওই রাতেই শাহাদাত হোসেন ও নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন নুরুল আনোয়ার।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, ১৯ জুন দুপুরে দুজনের মধ্যে মুঠোফোনে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় নুরুল আনোয়ার শাহাদাত হোসেনকে উদ্দেশ করে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হন শাহাদাত। এ কারণে পরিস্থিতি অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়।

এই দুজনের বিরোধে দলের অনেক নেতাই অস্বস্তিতে আছেন। আর শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলার অনেক নেতা বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানান।

জানতে চাইলে নুরুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চন্দনাইশের বিরোধ মেটাতে হলে শাহাদাত হোসেনকে দক্ষিণ জেলার রাজনীতি নিয়ে মাথা না ঘামাতে দলীয় ফোরামে পরামর্শ দিয়েছিলাম। কারণ, শাহাদাত সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। এ জন্য চন্দনাইশ বিএনপির বিরোধ রয়ে গেছে। শাহাদাত পরদিন আমাকে ফোন করে দলীয় ফোরামে দেওয়া বক্তব্যের কৈফিয়ত চান।’

নুরুল আনোয়ার আরও বলেন, ‘ফোনালাপে শাহাদাত আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি তাঁকে রোহিঙ্গা বলেছি। কারণ, তাঁর বাড়ি চন্দনাইশের যে এলাকায় সেটা রোহিঙ্গা পাড়া। আমি কি ভুল বলেছি? এ জন্য তিনি আমার বাড়িতে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের পাঠান। ওরা আমার বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে মামলা করি।’

নুরুল আনোয়ারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন তাঁকে ‘মানসিক রোগী’ অভিহিত করেন। শাহাদাত বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আমি মাথা ঘামানোর কে? অথচ নুরুল আনোয়ার অপ্রাসঙ্গিকভাবে দলীয় ফোরামে আমাকে টেনে এনেছেন। এ জন্য তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি দুর্ব্যবহার করেন।’

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, নুরুল আনোয়ার এর আগে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ২০০৮ সালে চন্দনাইশে বিএনপির প্রার্থী মিজানুল হক চৌধুরীর সঙ্গেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। এ জন্য ২০১৫ সালে দল থেকে একবার বহিষ্কৃত হন নুরুল আনোয়ার।

নুরুল আনোয়ারের বাসায় হামলার অভিযোগের বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা আনোয়ারের বাসায় যান। তিনি যেন দুঃখ প্রকাশ করেন, সে জন্য কথা বলতে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁর বাসায় আমার নেতৃত্বে নাকি হামলা হয়েছে। এ জন্য থানায় মামলা হয়।’