এক-তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি

পাট ও আউশ ধান আবাদের ভরা মৌসুমেও যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছয় জেলার ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ হেক্টর চাষযোগ্য জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকছে। যা মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ফলে এ বছর পাট ও খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প থেকে চলতি মৌসুমে কৃষক সময়মতো প্রয়োজনীয় পানি পাননি। এদিকে বৃষ্টিপাতও এ বছর তুলনামূলক কম। খরায় পুড়ছে মাঠ। সেচ খরচ বাড়ার ভয়ে কৃষক ধান ও পাট চাষে তেমন আগ্রহ দেখাননি। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাননি। ফলে আউশ ধান চাষে কৃষক নিরুৎসাহিত হয়েছেন। এতে কৃষিজমি অনাবাদি পড়ে থাকছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি খরিপ-১ (১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই) মৌসুমে পাট, আউশ ধান, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হেক্টর ৬১৭ হেক্টর জমিতে। হিসাব অনুযায়ী অনাবাদি থাকছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ হেক্টর জমি।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক সুধেন্দু শেখর মালাকার বলেন, ‘এ বছর আউশ ও পাট মৌসুমে কুষ্টিয়ার জিকে প্রজেক্ট থেকে সময়মতো প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত মাঠে কৃষক কম খরচে সেচের পানি পায়নি। এ জন্য অনেকে সেচ খরচ বাড়ার ভয়ে আউশ ধান চাষে ততটা আগ্রহী হয়নি। বৃষ্টিপাতও এবার অনেক কম। এ ছাড়া এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষক ধানের তেমন দাম পায়নি। ফলে তারা ধান চাষে কিছুটা আগ্রহ হারিয়েছে।’

জিকে প্রকল্পের আওতায় সেচ কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২৯ মে পাউবো কুষ্টিয়ার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি পাঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক।

ওই চিঠিতে বলা হয়, জিকে প্রকল্পের আওতায় সেচ কার্যক্রম চলমান না থাকায় আউশ ধান আবাদে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া আবাদকৃত আউশের জমি পানির অভাবে ইতিমধ্যে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কুষ্টিয়ার খাদ্য উৎপাদনে কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জিকে সেচ প্রকল্পের পানি কৃষক সময়মতো পায়নি। এতে আউশ আবাদে সমস্যা হয়েছে।’

জানতে চাইলে পাউবো কুষ্টিয়ার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, ‘ওই সময়ে সেচপাম্প বন্ধ রেখে বার্ষিক মেরামতের কাজ করা হয়েছে। যে কারণে তখন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে ১০ জুন থেকে সেচের পানি খালে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আউশ আবাদের মৌসুম। ১৫ জুন পর্যন্ত ছয় জেলার মধ্যে মাগুরায় আউশ ধানের আবাদ সবচেয়ে কম হয়েছে। এই জেলায় ৫ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। এ ছাড়া যশোরে ১৯ হাজার ১৫০ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ৩৬০ হেক্টরে, ঝিনাইদহে ৩৩ হাজার ৮৫ হেক্টরের বিপরীতে ২৫ হাজার ৩৪০, কুষ্টিয়ায় ২৯ হাজার ২৩১ হেক্টরের বিপরীতে ২০ হাজার ২২৫, চুয়াডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টরের বিপরীতে ১১ হাজার ১৮০ ও মেহেরপুরে ১৯ হাজার ৯০০ হেক্টরের বিপরীতে ১২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান এ বছর চার বিঘা জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের মাঠে এখন খরা চলছে। দিনে দুবার সেচ দিয়ে খেত ভেজাতে হচ্ছে। এতে তাঁর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘আউশ ধান করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণসহ এক হাজার টাকা ভর্তুকি পেয়েছি। ওই টাকা না নিলে আমি এ বছর আউশ ধান করতাম না। গত বোরো ধানের ন্যায্য দাম পাইনি। সে ধান এখনো ঘরে রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এবারও লোকসান গুনতে হবে।’

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক সুধেন্দু বলেন, ‘আউশ ধানের বীজতলার বয়স ২০ থেকে ২২ দিন হলে চারা রোপণ করা যায়। এ ধান লাগানোর সময় আছে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত। বৃষ্টিপাত একটু বাড়লে এ সময়ের আউশ ধানের আবাদ আরও কিছু জমিতে বাড়তে পারে।’