এমপিওভুক্তির জন্য প্রভাবশালীদের জোর তদবির

>

নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শর্ত শিথিল করে অনগ্রসর এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এমপিওভুক্তির উদ্যোগ।

শেষ সময়ে এসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত করার শর্ত কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব উপজেলায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রাখতে এবং হাওর, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, নারী এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনগ্রসর এলাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতেই মূলত ওই সব এলাকার প্রতিষ্ঠানের জন্য শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। আবার এমপিওভুক্ত করার জন্য এখন বিভিন্ন এলাকার সাংসদসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের চাপও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিরা’ জোরালো তদবির করছেন। তবে নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য সব কটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সম্মতি পেলেই তালিকা ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘প্রচুর চাপ’ থাকায় এমপিওভুক্তি নিয়ে কিছুটা সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে তাদের মধ্যে। এর আগে ২০১০ সালে এমপিওভুক্তির সময় সংকট দেখা দেয়। তখন একবার তালিকা ঘোষণা করেও তালিকা বাতিল
করতে হয়েছিল। পরে তালিকা সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিমালার আলোকে আবেদন করেও যেসব উপজেলায় কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি, সেসব উপজেলার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে সব উপজেলাতেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ মাসে সম্ভব না হলে আগামী মাসেই এমপিওভুক্তির তালিকা ঘোষণা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, এমপিওভুক্তির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত অবস্থায় আছে। খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, তাঁরা নীতিমালার আলোকে যোগ্য হওয়া সব কটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে চান। যদিও সাংসদের অনেকে শুধু নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্তির পক্ষে নন। তাঁদের বক্তব্য, নীতিমালার পাশাপাশি তাঁদের সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে। ১১ জুন সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে এই প্রস্তাব দেন সরকারদলীয় সাংসদ খন্দকার গোলাম ফারুক। যদিও মন্ত্রী বলেছেন, নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৬ হাজারের বেশি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সাড়ে ৫ হাজারের মতো। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। এরপর এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ জারি করে। তার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার—এই চার মানদণ্ড অনুযায়ী, এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হয়। মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করে। সব শর্ত পূরণ করে যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে ২ হাজার ৭৬২টি। এর মধ্যে বিদ্যালয় ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি এবং মাদ্রাসা ৫৫১টি ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য ‘প্রয়োজনীয় অর্থের’ জোগান রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাজেট ঘোষণার পর এমপিওভুক্তির কাজের গতি পায়। এখন শেষবারের মতো প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এ নিয়ে সভা হতে পারে। নীতিমালাতেও অনগ্রসর এলাকার জন্য শর্ত শিথিলের সুযোগ রয়েছে।

নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান স্বীকৃতি পাওয়া সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই দ্রুত এমপিওভুক্ত করে ঘোষণা দেওয়া হোক।