চলাচলের নিত্যসঙ্গী ঝুঁকি

নতুনবসতি খালের ওপর নির্মিত সেতু বেহাল। শুক্রবার দুপুরে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
নতুনবসতি খালের ওপর নির্মিত সেতু বেহাল। শুক্রবার দুপুরে তোলা ছবি। প্রথম আলো

সেতুর রেলিং ভেঙে রড বেরিয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে পিলারগুলোও। ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের সময়ও সেতুটি কাঁপে। এ কারণে প্রায় চার বছর আগে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবু আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ এই সেতু দিয়েই জেলা সদরে যাতায়াত করছে। এই পরিস্থিতি মানিকগঞ্জ জেলা শহরের অদূরে নতুনবসতি সেতুটির।

স্থানীয় দিঘী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মোল্লা বলেন, জেলা সদরের কাছের নতুনবসতি, দিঘী, ছুটি ভাটবাউর, কয়রা, পিতলাই, শুশুন্ডা, খরসতাই, রৌহাদহ ও চাননগর—এই ১০টি গ্রামের মানুষ সেতুটি দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব গ্রামের কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া এসব গ্রামে তিন ফসলি জমির উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাটবাজারে নিতেও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কৃষকেরা।
এলজিইডির সদর উপজেলা কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে জেলা সদরের দিঘী ইউনিয়নের নতুনবসতি খালের ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এলজিইডি। এরপর সেতুর পূর্ব পাশে ‘সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বেহাল এ সেতুর পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। গত বছর সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা ও সেতুর নকশা প্রণয়ন করা হয়। তবে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। তবে সম্প্রতি সেতুটি নির্মাণে আবারও উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে জেলা শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে নতুনবসতি খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় জনবসতি কম থাকায় সেতুটিও সরু করে নির্মাণ করা হয়। সেতুটি চওড়া কম হওয়ায় এতে বড় ধরনের যান চলাচল করতে পারে না। বর্তমানে সেতুটির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আশপাশের গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, সরিষা, তামাক, পাটসহ অন্যান্য শস্য ছোট ট্রলি, টেম্পো বা রিকশা-ভ্যানে করে হাটবাজারে নিতে হয়। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির পিলার এবং ওপরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে রড বেরিয়ে গেছে। সেতুটির রেলিংও ভেঙে ভেঙে পড়ছে। এসব রডে মরিচা ধরে গেছে। সেতুর ওপরের পশ্চিম পাশের কিছু অংশে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবু ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর ছোট যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে।
স্থানীয় নতুনবসতি গ্রামের আকরাম হোসেন বলেন, সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটা টেম্পো উঠলেও সেতুটি কেঁপে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী এখানে নতুন একটি সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফল মেলেনি।
দিঘী ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফুলচান মিয়া বলেন, জেলা শহরের কাছেই নতুনবসতি, দিঘী, চাননগর, কয়রা ও পিতলাই গ্রাম। সেতুটি সরু হওয়ায় বড় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তাই অনেকে বসতভিটা তৈরিতে মাটি ফেলতে পারছেন না। ফলে বাসাবাড়ি নির্মাণসহ কোনো কলকারখানা স্থাপন করা যাচ্ছে না। এই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কয়েক বছর ধরে ছোট যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কয়রা গ্রামের শামসুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নতুনবসতি-দিঘী-ডাউটিয়া সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। তবে নতুনবসতি সেতু নির্মাণ না হওয়ায় রাস্তাটির সুফল মিলছে না বললেই চলে। বড় যানবাহন চলাচল করতে না পারায় এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন তেমন একটা হচ্ছে না।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, নতুনবসতি খালের ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে সরকারি অর্থায়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে।