নারায়ণগঞ্জে ৫০০ গজ সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে

নারায়ণগঞ্জে মুসলিম নগর এলাকার সুলতান গিয়াস উদ্দিন সড়ক বেহাল।  সাম্প্রতিক ছবি।  প্রথম আলো -7
নারায়ণগঞ্জে মুসলিম নগর এলাকার সুলতান গিয়াস উদ্দিন সড়ক বেহাল। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো -7

মাত্র ৫০০ গজ সড়কের সংস্কার না হওয়ায় বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের হাজারো মানুষ। শুকনো মৌসুমে ধুলা আর বর্ষায় কাদায় একাকার হয়ে থাকা সড়কটিকে ব্যবহারের অনুপযোগী বলছেন পথচারীরা। এলাকাবাসীর মতে, এই সড়ক ভয়ংকর।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার স্বাধীনতা চত্বর (বাপ্পি চত্বর) থেকে সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের হাটখোলা মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার দীর্ঘ সুলতান গিয়াস উদ্দিন সড়ক। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরের সংযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির শীতলক্ষ্যা জোনাল অফিসসহ বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সড়কটির প্রায় ৫০০ গজ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দেওয়া হলেও গত ছয় বছরে সংস্কার করা হয়নি সড়কের এই অংশ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফটক থেকে হাটখোলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি কাদা-পানিতে ডুবে আছে। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও গর্তগুলো এক ফুট গভীর। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকা সেসব গর্তের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মালামাল বহনকারী যানবাহন। সড়কের পাশের একটি চায়ের দোকানে কথা হয় হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জগামী যানবাহনের যাত্রীরা নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে মুন্সিগঞ্জে প্রবেশ করেন। নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনাগুলো এই সড়ক ব্যবহার করে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে সড়কটির গুরুত্ব বেড়েছে। চায়ের দোকানি রিপন মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তা আমাগো লাইগা অভিশাপ। খোদার ৩০ দিনই অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) হয়।’ রিপন মিয়ার কথা শেষ না হতেই দোকানের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টে পড়েন একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি আহমেদ জুয়েল।
হাটখোলা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার বলে, বৃষ্টি হলে কাদা–পানি ছিটকে এসে ইউনিফর্ম নষ্ট হয়। শুষ্ক মৌসুমে ধুলার জন্য হাঁটা যায় না। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুন্সিগঞ্জের সুমাইয়া হাসান বলেন, ‘ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে চলাচল করি। কিন্তু এই সড়কটির সামান্য অংশটুকুর জন্যই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছি না। ভয়ে থাকি কখন না লেগুনা উল্টে লাশ হয়ে যাই।’ ইজিবাইকের চালক আলাউদ্দিনের মতে, সড়কটি ভয়ংকর। তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি উল্টে যায়, হাত-পা ভাঙে। ভাঙা রাস্তার কারণে যানজটে সময় নষ্ট হয়।
সড়কটির সর্বশেষ কবে সংস্কার হয়েছিল সেটা জানেন না কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই সড়কের ভাঙা অংশটি ইউনিয়ন পরিষদের। বাকিটুকু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু সম্পূর্ণ সড়কটিই সিটি করপোরেশন সংস্কার করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মেয়র সম্পূর্ণ সড়কটিই সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাটখোলা মোড় থেকে স্বাধীনতা চত্বর পর্যন্ত সড়কটিতে নালাসহ আরসিসি ঢালাই হবে। রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সড়কটি সরু হওয়ায় সেদিকটা প্রশস্ত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।’