পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে দেড় লাখ রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতি।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো

বর্ষা নিয়ে আতঙ্কে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অতিঝুঁকিতে থাকা ৪ হাজার ৩৫০ পরিবারের ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের বর্ষা মৌসুমেও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছিল। এবারও তাই হচ্ছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী দেড় মাস সময়ে অতিঝুঁকিতে থাকা ৪ হাজার ৩৫০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে কয়েক দফায় সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে।
উখিয়ার কুতুপালং, কুতুপালং ফাইভ-ডি, মধুর ছড়া, জুমশিয়া, লম্বাশিয়া, বালুখালী রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া বৃষ্টিতে পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি অসংখ্য ঘরবাড়ির তলার মাটি সরে গেছে। কিছু ঘর হেলে পড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত কিংবা ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকলে এসব ঘর নিচে ধসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
উখিয়ার জুমশিয়া পাহাড়ের ৯০ ফুট উঁচুতে (পাহাড়ের ঢালুতে) ঝুপড়ি ঘরে বসবাস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলীবাজার থেকে পলিয়ে আসা রোহিঙ্গা নুরুল আমিন। সঙ্গে মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও দুই ছেলে। নুরুল আমিন (৫৬) বলেন, গত বছরের বর্ষায় পাহাড়ধসে তাঁর আশপাশের ১০-১২টি ঘর বিলীন হয়েছিল। এবার তাঁর ঘর ঝুঁকিতে পড়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
কুতুপালং ও বালুখালী শিবিরের আশপাশের কয়েকটি উঁচু পাহাড়ের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে উত্তর দিকে চলে গেছে মধুর ছড়া খাল। খালের দুই পাশের ৫০ থেকে ১০০ ফুট উচ্চতার কয়েকটি পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠে মধুর ছড়া আশ্রয়শিবির। এ শিবিরের বাসিন্দা প্রায় তিন লাখ। এর মধ্যে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৮০ হাজার রোহিঙ্গা।
বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) জাকের হোসেন বলেন, বর্ষার শুরুতে পাহাড়ধসের ঝুঁকির পাশাপাশি শিবিরে অপরাধ বেড়ে চলেছে। সন্ধ্যার পর অন্ধকার শিবিরে মাদক বিক্রির হাট বসে। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ধসের আতঙ্ক।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন। বন বিভাগের তথ্য মতে, ৩৪টি আশ্রয়শিবির তৈরির বিপরীতে উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ৮ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। গত বছর একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই শিশুসহ পাঁচজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছিল।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সহসা শুরু হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভাসানচরেও এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জটিলতা আছে। যত দিন রোহিঙ্গারা এ দেশে থাকছে, তত দিন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।