সরকারি ভবনে ইটের বিকল্প ব্যবহারের তাগিদ

রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ইটের ব্যবহার’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ইটের ব্যবহার’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

ইট তৈরিতে উর্বর মাটি ব্যবহার করা হয়। ফসল উৎপাদনকারী এই উর্বর মাটি ও পরিবেশ রক্ষা করতে হলে মাটিতে পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ভবনে ইটের বিকল্প ব্লক ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসব ব্লক ব্যবহারের প্রবণতা তৈরি হবে। এতে রক্ষা পাবে উর্বর মাটি ও পরিবেশ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ইটের ব্যবহার’ শীর্ষক এক জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই), জগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ। সুইস এশিয়া প্রকল্পের অধীনে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ বলেন, আমরা ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে যুগ উপযোগী করেছি। একদিকে যেমন উন্নয়ন করতে হবে আরেক দিকে পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্লকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ ব্লকের উৎপাদন করলে সে জন্য লাইসেন্স করতে হবে না। এ ছাড়া আরও কীভাবে মাটিতে পোড়ানো ইটের ব্যবহার বন্ধ করা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। এটির ব্যবহার রোধে সচেতনতার ওপর জোর দেওয়ার কথা জানান তিনি।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তাঁর এক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমরা ইটের বিকল্প তৈরির কথা বলছি সঙ্গে সঙ্গে এর মানের কথাও ভাবতে হবে। ভালো মানের ব্লক ব্যবহার একবার জনপ্রিয় হলে মাটি ও পরিবেশ রক্ষা করা অনেকটাই সহজ হবে। আমাদের দেশের সরকার যেসব ভবন করে সেখানে ইটের বিকল্প ব্লক ব্যবহার করা শুরু করতে হবে। তাহলে মানুষ এটি ব্যবহারে আস্থা বাড়বে।

ব্লকের ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে এই স্থপতি বলেন, ব্লক ইটের থেকে অনেক হালকা তাই ভবন ভারী হবে না। এ ছাড়া ব্লকের ব্যবহারে নির্মাণ খরচ ২৫-৩০ শতাংশ কম হয়।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার করে সনাতনী পোড়ানো ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রতিবছর আমরা শতকরা ১ শতাংশ কৃষি জমি হারাচ্ছি। মাটি দিয়ে পোড়ানো ইটের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশাবলী জারি করে অপোড়ানো বিকল্প ইটকে সকল আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পোড়ানো ইটের বিকল্প ইট প্রচলনে পরিবেশবান্ধব কাঁচামালের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এইচবিআরআইয়ের মহাপরিচালক শামিম আক্তার বলেন, পোড়ানো ইটের নেতিবাচক দিক অনেক। সরকার ২০২০ সালের মধ্যে মাটিতে পোড়ানো ইটের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বলেছে সেটি মাথায় রেখে আমরা ইটের বিকল্প বিভিন্ন ব্লক তৈরি করেছি। এসব ব্লক ব্যবহারে বাড়ির নির্মাণ খরচ অনেকটাই কমে আসে। ইটের বিকল্প ব্যবহারে ইতিমধ্যে সরকার টেন্ডার শিডিউলে বিকল্প ইটের কথা অন্তর্ভুক্ত করার কাজ করছে। সরকারি বিভিন্ন ভবন নির্মাণে এই বিকল্প ইট ব্যবহার করলে মানুষের মধ্যে এটির ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে।

এইচবিআরআইয়ের সাবেক পরিচালক আবু সাদেক বলেন, একটি ইটভাটা ১ হাজার ঘনফুট মাটি ব্যবহার করে গড়ে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ ইট উৎপাদন করে। এতে যে পরিমাণ উর্বর মাটি নষ্ট হয় তাতে কৃষির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতাবাচক প্রভাব পড়ে। ইট ভাটায় যে পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হয় তাতে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়। এটি কমাতে এইচবিআরআই যে বিকল্প ইট বা ব্লক তৈরি করেছে তা পরিবেশবান্ধব। এই ইট নদীর তলদেশের মাটি দিয়ে তৈরি হয় ও মাটি পোড়াতে হয় না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর দিপংকর দত্ত। এ ছাড়া জগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের পরিচালক অদিতি আরজু, অক্সফামের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক খালিদ হোসেন, মীর কংক্রিটের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. সেলিম।