খোঁজ নেই প্রহরীর, পড়ে আছে রক্তমাখা শার্ট

নিখোঁজ ইয়াকুব আলী শেখ। ছবি: সংগৃহীত
নিখোঁজ ইয়াকুব আলী শেখ। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক নৈশ প্রহরীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলের বারান্দা থেকে তাঁর রক্তমাখা টিশার্ট, মশারি, বালিশ ও মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি স্কুলের বারান্দার মেঝেতে রক্তের মোটা দাগও দেখা যায়।

‘নিখোঁজ’ ওই ব্যক্তির নাম ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। ইয়াকুবের পরিবার জানিয়েছে, তিনি সোমবার বিকেলে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর বাড়ি ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের পশ্চিম বিলনালিয়া গ্রামে। তিনি দুই সন্তানের জনক। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান শহরের স্টেশন রোডে।

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, ‘আজ সকাল ৮টার দিকে ঝাড়ুদার দুলাল জমাদ্দার প্রথম স্কুলে এসে মেইন গেট বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এরপর তিনি আমার বাড়িতে চলে আসেন। পরে দপ্তরি রেজাউল করিমকে ডেকে স্কুলের গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। এরপর স্কুলের বারান্দায় ইয়াকুবের গায়ের রক্তমাখা টিশার্ট এবং দরজা ও মেঝে জুড়ে রক্ত লেগে থাকতে দেখি। পাশেই তাঁর মোবাইল ফোনটিও পড়েছিল। এরপর পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দিই।’ তিনি জানান, স্কুলের আশপাশে সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজেও ইয়াকুবের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে ডিউটি করতে চাইছিলেন না তাঁর স্বামী। গত জানুয়ারি মাসে এ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে চুরি হয়েছিল। গত ঈদুল ফিতরের দুই দিন পর ওই বিদ্যালয়ে চোর ঢোকে। ইয়াকুব তাদের তাড়িয়ে দেন। তখন চোরেরা ইয়াকুবকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তা ছাড়া মাদক সেবীদের প্রচুর উৎপাত হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করত না। অনেকবার স্কুলের শিক্ষকদের নিকট নালিশও করেছেন।

স্কুলের এই বারান্দায় নৈশ প্রহরীর দায়িত্বপালন করতেন ইয়াকুব আলী। সেখানেই দেখা গেল রক্তের আলামত। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ২৫ জুন। ছবি: প্রবীর কান্তি বালা
স্কুলের এই বারান্দায় নৈশ প্রহরীর দায়িত্বপালন করতেন ইয়াকুব আলী। সেখানেই দেখা গেল রক্তের আলামত। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ২৫ জুন। ছবি: প্রবীর কান্তি বালা

ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল বলেন, ‘দুলাভাই গত কয়েক দিন ধরে খুব ভীত ছিলেন। স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় আড্ডা বসাতো। তিনি বলেন, এ কারণে দুলাভাইয়ের বেশ শত্রু তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ভয় লাগে বলে কয়েক দিন আগে দুলাভাই আমাকে তাঁর সঙ্গে স্কুলে থাকতে বলেছেন।’

ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে শামীমা শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, ‘রাতে মাঝেমধ্যে মাদকসেবীরা উৎপাত করত। সেগুলো ইয়াকুব আমাদের জানালে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে সেসব জানাই। তারা কয়েকবার ধাওয়া করে ওদের তাড়িয়েও দেয়।’

স্কুল সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ইয়াকুব ছাড়াও ফারুখ হোসেন (৩৮) নামে আরেকজন নৈশ প্রহরী ছিলেন। তবে তারা সাধারণত পালাক্রমে কাজ করতেন। সোমবার রাতে প্রহরার দায়িত্ব ছিল ইয়াকুবের। ইয়াকুবের স্বজনেরা জানিয়েছেন, গত সাত বছর ধরে তিনি এই স্কুলে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি শহরের দক্ষিণ আলীপুরে একটি সেলুনে কাজ করতেন।

ইয়াকুবের স্বজনদের আহাজারি। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ২৫ জুন। ছবি: প্রবীর কান্তি বালা
ইয়াকুবের স্বজনদের আহাজারি। ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ২৫ জুন। ছবি: প্রবীর কান্তি বালা

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলটি কংক্রিটের সাত ফিট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। স্কুলে প্রবেশের একটি মাত্র ফটক। যা রাতে ভেতর থেকে তালাবদ্ধ থাকে। বারান্দা ব্যতীত স্কুলের অন্য কোথাও রক্তের ছাপ দেখা যায়নি।

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কোতোয়ালি থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁকে খুঁজে বের করতে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’