পোশাকশ্রমিকেরা নির্যাতনের শিকার হন না কোথায়?

১৪ শতাংশ পোশাকশ্রমিককে তাঁদের বাড়িওয়ালা নির্যাতন ও হয়রানি করেন। বাসা থেকে কর্মস্থলে আসা–যাওয়ার পথে ৭৭ শতাংশ পোশাকশ্রমিক গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। আর কর্মস্থলে ৫১ শতাংশ পোশাকশ্রমিক শারীরিকভাবে এবং ৪৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হন।

‘কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি নির্যাতন ও হয়রানি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশের পোশাকশিল্প’ শীর্ষক এক গবেষণাতে এই চিত্র উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরাম যৌথভাবে এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরা হয়। আবাসস্থলে হয়রানির নির্যাতন প্রসঙ্গে গবেষণাতে এসেছে, বাড়িওয়ালারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, রুমের ভাড়ার টাকা না নেওয়া, বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে পোশাকশ্রমিকদের হয়রানি করে থাকেন। ৩৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁরা যদি মালিকের কথা না শোনেন, তাহলে তাঁদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর বাড়িওয়ালার প্রস্তাবে রাজি হলে, ঘরভাড়া মওকুফ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

গবেষণাটির জন্য আটটি দলগত আলোচনা এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ১৭৩ জন নারী–পুরুষের কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত নেওয়া হয়। গবেষণায় ৯০ শতাংশ নারী তাঁদের কর্মক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। ৩৯ শতাংশ নারী পোশাকশ্রমিক বলেছেন, তাঁরা কর্মস্থলে নিরাপদ বোধ করেন না। ৪৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁদের কারখানায় নির্যাতন বা হয়রানি মোকাবিলায় ব্যবস্থা থাকলেও তার কার্যকরতা সন্তোষজনক নয়।

জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে অন্তত ৪৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক জানান, গণপরিবহনে যাতায়াতে তাঁদের প্রতিদিনই শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ইচ্ছাকৃত স্পর্শের শিকার হতে হয়। বাসের কন্ডাক্টর, হেলপার এবং পুরুষ যাত্রীরা এই কাজ বেশি করে থাকেন। বাসের হেলপাররা সব সময় বাসে ওঠা–নামার সময় তাঁদের গায়ে হাত দেন। এর প্রতিবাদ করলে খারাপ কথা বলেন।

গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আশুলিয়া, টঙ্গী, তুরাগ, ধামরাই, উত্তরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকার পোশাকশ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

ফলাফল তুলে ধরার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক আবুল হোসাইন বলেন, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে? নির্যাতন সব সময় দুর্বলের ওপরই হয়। এটাই নিয়ম।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গবেষণাপত্রটি অত্যন্ত শ্রমবান্ধব বলে মনে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পোশাকশিল্প খাতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের দুঃসময়ের একটি চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। যাঁরা শ্রমিক তাঁরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর তাঁরাই সব সমস্যায় আছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।

গবেষণাটি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এটা খুবই সাধারণ চিত্র। এর মধ্য দিয়ে এই সমাজের বাস্তব চেহারাটি উঠে এসেছে। কারখানায় ঢুকতে গার্ড থেকে শুরু করে ভেতরে ম্যানেজার পর্যন্ত নারী পোশাকশ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।’

অনুষ্ঠানে গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরেন নাগরিক উদ্যোগের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির সমন্বয়ক মঞ্জুরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন নারীপক্ষের রওশন আরা, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নাজমা আকতার, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কস ফেডারেশনের লাভলি ইয়াসমিন, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কস ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম প্রমুখ।