বিয়ের কথা বলে ১১ রোহিঙ্গা তরুণীকে পাচারের চেষ্টা

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ১১ রোহিঙ্গা তরুণীসহ ১৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এসব তরুণীদের মালয়েশিয়ায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফে যে তিন ব্যক্তি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তাদের মধ্যে দুজন এই পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

আটক হওয়া এসব তরুণীরা উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে। সোমবার রাতে পুলিশ এসব রোহিঙ্গাদের আটক করে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর পর ভালো পাত্রে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ১১ তরুণীসহ ১৫ রোহিঙ্গাকে টেকনাফ নিয়ে আসে দালালচক্র। রোহিঙ্গাদের স্বীকারোক্তি মতে, পুলিশ মঙ্গলবার ভোররাতে টেকনাফ সমুদ্র উপকূলের নৌকাঘাটে মানবপাচারকারীদের ধরতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে তিন মানবপাচারকারী নিহত হন । পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এলজি, শটগানের ১৫টি গুলি ও ২০টি খোসা জব্দ করে।

মঙ্গলবার দুপুরে টেকনাফ থানায় আটক রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদকেরা। রোহিঙ্গা তরুণী জয়নাব বিবি (১৮) বলেন, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে তাঁকে বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করা হয়েছে-এমন প্রলোভনে কুরবান আলী (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) তাঁকে শিবির থেকে টেকনাফে আনে। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের এই বাসিন্দা আরও বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের বলিবাজার থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি ওই শিবিরে আশ্রয় নেন। থানায় জয়নাব বিবির সঙ্গে ছিলেন, একই শিবিরের তরুণী জুহুরা বেগম, দিলদার বেগম, আফিফা আক্তার, হাজেরা বেগমসহ বাকিরা।

জুহুরা বেগম ও হাজেরা বেগম বলেন, গত ১৯জুন বিকেলে কুরবান আলী তিনটি টমটমে করে বালুখালী থেকে ১৫ রোহিঙ্গাকে টেকনাফে আনে। রাতে তাঁদের রাখা হয় টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীপাড়ার আবদুর রহমানের (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) বাড়িতে। আবদুর রহমান কুরবান আলীর শ্যালক। দুই দিন পর রাতে তাদের টমটমে করে নেওয়া হয় পাহাড়ের জঙ্গলে আবদুল হাকিমের বাড়িতে। সেখানে মালয়েশিয়া পাঠানোর ট্রলার ভাড়া বাবদ মাথাপিছু ৬ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সোমবার (২৪ জুন) ট্রলারে তুলে দেওয়ার কথা বলে তাঁদের পাহাড়ের জঙ্গল থেকে আনা হয় টেকনাফ উপজেলা পরিষদ এলাকায়।

থানা হাজতে কান্নাকাটি করছিলেন আফিফা আক্তার নামের আরেক রোহিঙ্গা তরুণী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস আগে মোবাইলে মালয়েশিয়া প্রবাসী জালাল নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর নির্দেশে তিনি দালালের সঙ্গে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে বের হয়েছিলেন। এখন বুঝতে পারছেন-ঘর থেকে এভাবে বের হওয়াটা ভুল হয়েছে।

থানায় আটক রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ (৩৪) বললেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর ভবঘুরে দিন কাটছে তাঁর। কোনো কাজ-কর্ম ছিল না। মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির আশায় তিনি অন্যদের সঙ্গে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এখন হাজতে আটকা পড়ে খারাপ লাগছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ১১ তরুণীসহ আটক ১৫ রোহিঙ্গাকে বুধবার কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হবে। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি বলেন, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে মানবপাচারকারীরা এই ১৫ রোহিঙ্গাকে উখিয়া থেকে টেকনাফ নিয়ে আসে। মানবপাচারকারী দলের দুই সদস্য কুরবান আলী ও আবদুর রহমান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। অন্যদের ধরার চেষ্টা চলছে।