ভেঙে ফেলা হবে 'প্রজাপতি গুহা'

আর কয়েক দিনের মধ্যেই ভেঙে ফেলা হবে পাতালপথটি। গতকাল কারওয়ান বাজারে।  প্রথম আলো
আর কয়েক দিনের মধ্যেই ভেঙে ফেলা হবে পাতালপথটি। গতকাল কারওয়ান বাজারে। প্রথম আলো

মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় পড়ায় কারওয়ান বাজারের ‘প্রজাপতি গুহা’ নামে পরিচিত পাতালপথটি ভেঙে ফেলা হবে। আগামী সপ্তাহে পাতালপথটি ভাঙার কাজ শুরু হবে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পথচারীদের সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা হিসেবে পাতালপথের কয়েক মিটার দূরে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ বা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে পড়ায় পাতালপথটি সরিয়ে নিতে হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, পাতালপথটি বেশ অপরিচ্ছন্ন। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভেতরে অন্ধকার। অধিকাংশ বাতি জ্বলছে না। প্রবেশমুখে কয়েকজন ভবঘুরে বসে আছে। পাতালপথের কয়েক মিটার সামনে নতুন একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুর চারদিকে ফুটপাতের ভাঙা অংশ মেরামত করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মারুফ কিবরিয়া প্রতিদিন এই পাতালপথ দিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে এই পাতালপথ নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো। লাইটও বেশি ছিল। বেশ কয়েক দিন ধরে এটির যত্ন সেভাবে নেওয়া হচ্ছে না।’

পাতালপথটি দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, পাতালপথটি কয়েক দিনের মধ্যে ভাঙা পড়বে—এটি জানার পর থেকে সিটি করপোরেশন আগের মতো দেখভাল করছে না। আগে পাতালপথে নিরাপত্তাকর্মী ছিল। এখন সেটিও নেই।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও একটি ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে পাতালপথটির সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়নে পাতালপথটির টাইলস পরিবর্তন, বাতি লাগানোর কাজ করা হয়।

>

মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় পড়ায় পাতালপথটি ভেঙে ফেলা হবে। পথচারীদের সড়ক পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

পাতালপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই নির্মাণ করা হয়েছে পদচারী–সেতুটি।  ছবি: প্রথম আলো
পাতালপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই নির্মাণ করা হয়েছে পদচারী–সেতুটি। ছবি: প্রথম আলো

ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, আগারগাঁও থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কটি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ চলার সময়ে সড়কের দায়িত্ব তাদের। এই সড়কে অবস্থিত পাতালপথটি ভাঙার ফলে জনগণের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ করা হয়েছিল।

গতকাল দেখা যায়, পথচারীদের পারাপারের জন্য নির্মিত নতুন পদচারী-সেতুটির এক পাশের সিঁড়ি সড়কের মাঝামাঝিতে নেমেছে। ফলে সড়কের এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে এলেও পুরোপুরি সড়ক পার হতে পারবেন না। বাকি অংশটুকু যানবাহনের মধ্য দিয়েই পার হতে হবে। সড়কের এক পাশের ফুটপাতে পদচারী-সেতুর সিঁড়ি বসানোর জায়গা না থাকায় এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পাতালপথটির জায়গায় মেট্রোরেলের একটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। স্টেশনের ভেতর দিয়ে সড়ক পারাপারের সুযোগ থাকবে। ফলে মেট্রোরেল চালু হলে পাতালপথের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মেট্রোরেলের প্যাকেজ-৫-এর চিফ প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ার মো. সারফরাজ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, কারওয়ান বাজারে নতুন পদচারী-সেতুর নির্মাণকাজ শেষ। ২৭ জুন চূড়ান্ত পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। ২৮ জুন এটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। এটি চালু হলে পাতালপথটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে।