কুমিল্লার চকবাজার বাসস্ট্যান্ডে জলাবদ্ধতা

কুমিল্লার চকবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জলবদ্ধতা। গত সোমবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লার চকবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জলবদ্ধতা। গত সোমবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

পুরো বাসস্ট্যান্ডে অন্তত এক ফুট উঁচু কাদামাটি জমে আছে। কোথাও কোথাও রয়েছে জলাবদ্ধতা। পানির ওপরই বাস দাঁড় করানো হয়েছে। কোনো কোনো অংশে আগাছা ও মশামাছি ওড়াউড়ি করছে। এই দৃশ্য কুমিল্লা নগরের চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের।

পরিবহনশ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতিবছর সিটি করপোরেশন এই বাসস্ট্যান্ড ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে। কিন্তু স্ট্যান্ডের উন্নয়নের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করছে না। গত এক দশকে এই বাসস্ট্যান্ডে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। অবিলম্বে বাসস্ট্যান্ড সংস্কার ও মেরামত করা দরকার।

এই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন কুমিল্লা, ফেনী, চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ও কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকায় শত শত বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। প্রতিদিনই ভোগান্তি নিয়ে পরিবহনশ্রমিকদের বাসস্ট্যান্ড থেকে মূল সড়কে তুলতে হয়। এতে যাত্রীদেরও সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের পরিবহনশ্রমিক নেতাদের অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার কথা হয়। তাঁরা বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রায় দুই একর জায়গা নিয়ে চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। তখন এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস যাতায়াত করত। সময়ের পরিক্রমায় ও নগরে আরও নতুন বাস টার্মিনাল হওয়ার কারণে এখন এই বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামে তিশা পরিবহন, ফেনীতে মদিনা পরিবহন, চৌদ্দগ্রামের কাশিনগরে বিজলি পরিবহন ও গোলাবাড়ি এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। বাসস্ট্যান্ডটি কুমিল্লার রাজগঞ্জ-চকবাজার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব ভাগে চষা জমির মতো অবস্থা। বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ফেনীর আদর্শ সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাদা মাড়িয়ে বাসে উঠতে হলো। একটি সিটি করপোরেশনের বাসস্ট্যান্ডের এমন বেহাল চিত্র আমাকে হতবাক করেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।’

ফেনীগামী মদিনা পরিবহনের চালক মাসুক মিয়া বলেন, সব সময়ই এই বাসস্ট্যান্ডে পানি জমে থাকে। গর্তে ভরা। সংস্কার করা হয় না।

চৌদ্দগ্রামের কাশিনগরগামী বিজলি পরিবহনের চালক জসিমউদ্দিন বলেন, ‘আমি সাত থেকে আট বছর ধরে বাস চালাই। এই রকম খারাপ অবস্থা দেখছি। কেউ কোনো নজর দেয় না।’

কুমিল্লা জেলা পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই বাসস্ট্যান্ড ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু কোনো কাজ করে না। বছরের পর বছর কোনো কাজ নেই। কোনো সংস্কার নেই। বাসস্ট্যান্ড ভালো হলে গাড়ি বাড়ত। অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো। এখন শ্রমিকেরা এই স্ট্যান্ডে কাজ করতে এলে পচা গন্ধযুক্ত পানিতে নেমে বাস ঠেলতে হয়। এতে তাঁদের হাতে পায়ে চর্মরোগ হয়। এই স্ট্যান্ড থেকে পানি নামার কোনো পথ নেই। এ কারণে জলাবদ্ধতা বলতে গেলে স্থায়ী রূপ নিয়েছে।

পরিবহনশ্রমিকদের ভাষ্যমতে, এই বাসস্ট্যান্ডের প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টাকা তোলা হয়। অটোরিকশা থেকে তোলা হয় ১০ টাকা করে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তোলা হয়। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের কোনো উন্নয়ন হয় না।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বাসস্ট্যান্ড ইজারা দিয়ে সিটি করপোরেশন ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছে। ৩০ জুন এই চুক্তি শেষ হবে। নতুন করে দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। আমি এটি সংস্কার করব।’

মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, ‘বর্তমানে আশ্রাফপুর বাস টার্মিনালের সংস্কারকাজ চলছে। ওই কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের কাজও করব।’