প্রথম আলো হোক আশার আলো

‘জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক’ এই শপথে হাত তুলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রথম আলো আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে আসা সবাই। গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
‘জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক’ এই শপথে হাত তুলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রথম আলো আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে আসা সবাই। গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর সংবাদ থেকে শুরু করে শিক্ষা পাতার লেখা—সবকিছুই আমাদের আশার আলো দেখায়। এই আলো আরও ছড়িয়ে পড়ুক। দেশের প্রতিটি বিষয় নিয়ে প্রথম আলো সৎ ও সত্যসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবে, এই প্রত্যাশা আমাদের। গতকাল মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।

শিক্ষকেরা প্রথম আলোর কাছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আরও বেশি সংবাদ প্রকাশের দাবি জানান। ‘জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মানে প্রথম আলো এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সাভার এলাকার ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪০ জন শিক্ষক এতে অংশ নেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ম্যাট্রেস তৈরির কোম্পানি ইউরো এশিয়ার সৌজন্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে দৈনিক দুটি করে প্রথম আলো পত্রিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা প্রথম আলোর এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম আলোর সহায়তায় লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া রেজাউল করিম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমি তখন নবম শ্রেণিতে, ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকে প্রথম আলো আমার শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যয় চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছি। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজকে আমি যে অবস্থায় এসেছি, তার পেছনে প্রথম আলোর অনেক অবদান।’

সাভার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাবশিরা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ের প্রথম আলোকে নিয়ে তাঁর স্মৃতি তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমি যখন ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন হলে প্রথম আলো পড়ার জন্য ভিড় জমে যেত। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার তিন মাস সময়ে প্রথম আলো শিক্ষা নিয়ে যে বিশেষ আয়োজন করে, তাতে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হয়। প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায় শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে যদি কিছু করা যায়, তাহলে ভালো হতো।’

সাভারের মানিক চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্কুল সব সময় ভালো ফল করে। কারণ, আমি প্রথম আলোর শিক্ষা পাতার লেখাগুলো আমার শিক্ষার্থীদের দিই।’

ইমানদিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী শাহানা ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন কোনো বাসায় যাই, তখন দেখি তারা কোন পত্রিকা রাখে। যদি দেখি প্রথম আলো, তাহলে বুঝি তাদের মনমানসিকতা উন্নত। তাদের সঙ্গে মুক্তমনে কথা বলা যাবে। এই পত্রিকাটি আমাদের মনের সঙ্গে জড়িত।’

বারুইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলালউদ্দিন বলেন, ‘প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায় ছাপা হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে যেসব লেখা প্রকাশ হয়, তা নিয়ে আলাদা করে আধা ঘণ্টা ক্লাস নিতে হয়।’

ফুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, ‘দেশ কীভাবে চলছে। কীভাবে এগিয়ে যাবে। তার দিকনির্দেশনা প্রথম আলো থেকে পাই।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, ‘অনেকে বলে পত্রিকায় শুধু নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রথম আলোতে আমার একটি গবেষণার সফলতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আমি জাতীয় পরিবেশ পদক পেয়েছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোতে আরও বেশি বেশি সংবাদ প্রকাশের আহ্বান জানান।

ইউরেশিয়া কোম্পানির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শুভজিৎ সরকার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি মুখরোচক বিজ্ঞাপন দেয় না। আমরা গুণগত মান উন্নত করায় বেশি বিশ্বাসী। আমরা ভালোর সঙ্গে আলোর পথে থাকা প্রথম আলোর সঙ্গে আছি।’

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো অ্যাসিড ছোড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এই অপরাধ কমিয়ে এনেছে। মাদকবিরোধী প্রচারণা, গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, কৃষি পদকসহ নানা উদ্যোগ আমরা নিই। সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি প্রথম আলো যেসব উদ্যোগ নেয়, তার প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের জয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতেই এত সব কাজ আমরা করি।’

অনুষ্ঠানে সাভার উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এবং প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক অরূপ রায় বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম আলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মিত দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রথম আলোর উপমহাব্যবস্থাপক (সার্কুলেশন সেল) অরূপ কুমার ঘোষ। শেষে গান গেয়ে শোনান শিক্ষক রুনা লায়লা ও শিক্ষার্থী শতাব্দী রায়, আবৃত্তি করেন শিক্ষক ফারহানা ইভা।