রণদাপ্রসাদ, তাঁর ছেলেসহ সাতজনকে হত্যা মামলার রায় কাল

মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা রণদাপ্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানীপ্রসাদ সাহাসহ সাতজনকে হত্যা করার ঘটনায় করা মামলার রায় কাল বৃহস্পতিবার প্রদান করা হবে। আজ বুধবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায়ের জন্য কাল দিন ধার্য করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলেসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা করা হয়। গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১২ ফেব্রুয়ারি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ২৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁর বিচার শুরু করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এক বছরের বেশি সময় পর আজ আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজি এম এইচ তামিম।

মামলার আরজিতে বলা হয়, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০ থেকে ২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদাপ্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালান। অভিযানে রণদাপ্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানীপ্রসাদ সাহা, রণদাপ্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব, রণদাপ্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন। রণদাপ্রসাদ সাহার পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একসময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদাপ্রসাদ সাহা। তিনি থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাঁদের ধরে নিয়ে যান আসামি মাহবুবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা।

আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুর রহমান ও তাঁর ভাই আবদুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।

রণদাপ্রসাদ সাহা ‘কুমুদিনী ডিসপেনসারি’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সেটিই কুমুদিনী হাসপাতাল নামে পূর্ণতা লাভ করে। এ ছাড়া তাঁর প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে ‘ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ’ স্থাপন করে ওই অঞ্চলে নারী শিক্ষার সুযোগ করে দেন। এটি ১৯৪৫ সালে ভারতেশ্বরী হোমসে রূপলাভ করে। ১৯৪৩ সালে টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বাবার নামে মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ স্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি মির্জাপুরে কুমুদিনী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।