দুদককে চিঠি প্রত্যাহারে সময় বেঁধে দিলেন সাংবাদিকেরা

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইস্যু করা তলবি চিঠি প্রত্যাহারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন সাংবাদিকেরা। এর আগে আজ বুধবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা দুদক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। তাঁরা বলেন, দুদক সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে। 

গত ২৩ জুন বাংলা ট্রিবিউন ‘লন্ডনপ্রবাসী দয়াছের অডিও সংলাপে ওরা কারা?’ এবং ওই রাতেই বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজও একই খবর প্রচার করে। প্রতিবেদনে লন্ডনপ্রবাসী মো. দয়াছ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথোপকথনের রেকর্ড উপস্থাপিত হয়। প্রতিবেদন দুটি থেকে বোঝা যায়, দয়াছ দুর্নীতি দমন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘুষ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রতিবেদনে মো. দয়াছকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে উদ্ধৃত করে কথা বলতে শোনা যায়। তাঁর সঙ্গে তোলা ছবিও প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের এক দিন পর গতকাল মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা নোটিশ জারি করে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক দীপু সারোয়ার ও এটিএন নিউজের ইমরান এইচ সুমনকে সাময়িক বরখাস্তকৃত উপমহাপরিদর্শক মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। নোটিশের শেষে লেখা হয়, ‘আগামী ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকে কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’

সংবাদ প্রচারের জন্য দুদক এ ধরনের চিঠি দিতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবাদে গতকাল সকালে সাংবাদিকেরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র‍্যাক), ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব), ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশসহ (ডিক্যাব) বিভিন্ন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা চার দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দাবিগুলো হলো দুদক যে আপত্তিকর ভাষায় চিঠি দিয়েছে, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে, যিনি চিঠি ইস্যু করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এক বিবৃতিতে দুদকের চিঠির তীব্র নিন্দা জানান। অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশের পর সাংবাদিকদের নোটিশ দিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি হুমকি হিসেবে মনে করছে তারা। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দুদক কার্যালয়ের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধন করবে।

দুদকের গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, চিঠির ঘটনায় শেখ মো. ফানাফিল্যাহকে শোকজ করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের হাতে আসা ওই চিঠির ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

২৫ জুন তলবি চিঠিটি ইস্যু হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সাংবাদিক রাশেদ চৌধুরী ফেসবুকে লেখেন, ‘সাংবাদিককে তার সূত্র জানাতে বাধ্য করা যায় না, দুদকের তা জানা উচিত।’ প্রকাশনা সংস্থা শ্রাবণের রবিন আহসান লিখেছেন, ‘দুদকে দুদক অভিযান চালাক আগে।’ আমাদের সময়ের সাংবাদিক হাবিব রহমান বলেন, দুদকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হলো সংবাদমাধ্যম। রিপোর্টারদের সঙ্গে ঝামেলাকারী দুদক কর্মকর্তারা আলটিমেটলি প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি করছেন। দ্রুত এই অবস্থার নিরসন হওয়া উচিত।