'গায়েবি' যৌতুক মামলায় আট দিন কারাবাসের পর অব্যাহতি

সাজ্জাদুল হক
সাজ্জাদুল হক

বাদী ও সাক্ষীদের অস্তিত্ব নেই, এমন একটি মামলায় ৮ দিন কারাবাস করা বরিশালের সাজ্জাদুল হককে (৩৫) মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মামলাটি বানোয়াট প্রমাণিত হওয়ায় সাজ্জাদুলকে অব্যাহতি দেন ঢাকা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-৪-এর বিচারক তাবাসসুম ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার সাজ্জাদুল এই আদেশের কপি হাতে পান।

সাজ্জাদুল হক বরিশাল নগরের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক। পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জের আরশিনগর এলাকার রুনা (২৬) নামের এক নারী সাজ্জাদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে গত ১১ মার্চ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-৪ এ যৌতুক আইনে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, এক লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় সাজ্জাদুল ওই নারীকে নির্যাতন করেন। আদালতে যে বিবাহ নিবন্ধন নথি দাখিল করা হয়, তাতে উল্লেখ আছে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ সাজ্জাদ ও রুনার বিয়ে হয়। রাজধানীর লালমাটিয়ার কাজী গোলাম কিবরিয়া তাঁদের এই বিবাহ নিবন্ধন করেন। ওই মামলায় আদালত সাজ্জাদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

কিন্তু সাজ্জাদুল তখনো কোথায়, কিসের মামলা কিছুই জানতেন না। পরে সাজ্জাদুলের বাবা ঢাকায় গিয়ে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এই মামলার খবর। আদালত থেকে মামলার কাগজপত্র তুলে সাজ্জাদুলের পরিবার অনুসন্ধান শুরু করেন। এতে দেখা যায়, মামলায় বাদীর এবং সাক্ষীদের যে নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনো হদিস নেই। এমনকি মামলার বাদীর আইনজীবী খায়রুল আমিনের মুঠোফোন নম্বর এবং যে ঠিকানা উল্লেখ করেছেন তাও ভুয়া। এ ছাড়া যে কাজীর কাছ থেকে বিবাহ নিবন্ধনের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় তাও সঠিক ছিল না।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী গত ১৫ এপ্রিল বরিশাল কোতোয়ালি থানার পুলিশ সাজ্জাদুলকে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২০ এপ্রিল তিনি ঢাকার ওই আদালত থেকে জামিন পান। ওই দিন জামিন পেলেও কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মেলে ২৩ এপ্রিল। এ নিয়ে গত ২৫ মে প্রথম আলোতে ‘গায়েবি যৌতুক মামলায় আট দিন কারাবাস’ শিরোনামে খবর ছাপা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সাজ্জাদুলের এই মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এ দিন বাদী ও তাঁর আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট কেউই আদালতে উপস্থিত হননি। এরপর মামলাটি খারিজ করে সাজ্জাদুলকে অব্যাহতি দেন আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী খায়রুল আমিন লিখিতভাবে আদালতকে জানান, এই মামলায় তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ তাঁর সিল, স্বাক্ষর ব্যবহার করে এই মামলায় তাঁকে আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করেছে।

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর সাজ্জাদুল আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের এই আদেশে আমি খুব খুশি। ওই নারীকে বিয়ে তো দূরের কথা, তাঁকে চিনিও না। শত্রুতা করে কোনো নারীকে দিয়ে জাল-কাবিননামা দিয়ে হয়রানির জন্য আমার বিরুদ্ধে এই কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল।’ তিনি সন্দেহ করছেন, তাঁর এক সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার এই মামলা করাতে পারেন। তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চান।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোহাম্মাদ ফোরকান মিয়া আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৩ মে স্থায়ী জামিন প্রদানের সময় আদালত আসামিপক্ষকে বলেছেন, এই মামলা মিথ্যা, বানোয়াট। এ জন্য ২৫ জুন মামলার ধার্য তারিখে অভিযোগ গঠনের দিন (চার্জ শুনানি) নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন বিচারক। একই সঙ্গে ওই দিন এ মামলার বাদীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি আইনজীবী ও কাজীকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু গত মঙ্গলবারও বাদী হাজির হননি। এমনকি তার আইনজীবীও এই মামলার আইনজীবী নন বলে আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। পরে মামলাটি খারিজ করে সাজ্জাদুলকে অব্যাহতি দেন বিচারক।

সাজ্জাদুলের আইনজীবী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বিশ্বাস বলেন, কাল্পনিক অভিযোগ, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে সাজ্জাদুলকে সামাজিকভাবে হেয় এবং হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত এটা অনুধাবন করেই সাজ্জাদুলকে অব্যাহতি দিয়েছেন।