জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

সোহেল রানা। ফাইল ছবি
সোহেল রানা। ফাইল ছবি

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বুধবার এই অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপপরিচালক দেওয়ান সফিউদ্দিন আহমেদ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন সোহেল রানা। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুদকের সাবেক উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে সাভার থানায় মামলা করেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সোহেল রানার ব্যাংক হিসাব এবং আয়করসংক্রান্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাভারের এক চিকিৎসক মোশারফ হোসেনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকায় ১০ শতাংশের কিছু বেশি জমি কেনেন। সোহেল সাভার পৌরসভায় ১২তলা ভবন তৈরির জন্য আবেদন করেন। ২০০৮ সালে কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে আটতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়। সোহেল রানার আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি জমির মূল্য দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকা। চতুর্থ তলা পর্যন্ত নির্মাণব্যয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৪ টাকা।

তদন্ত কর্মকর্তা দেওয়ান সফিউদ্দিন আহমেদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে তিনি সাভারে রানা প্লাজার বাড়িটি পরিদর্শন করে পরিমাপ করেন। ভবনটি নির্মিত হয়েছে ভবনমালিকের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত মোট নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৭৩ টাকা। অথচ সোহেল রানা ২০১২-২০১৩ কর বছরে আয়কর রিটার্নে চতুর্থ তলা পর্যন্ত নির্মাণব্যয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৪ টাকা। অর্থাৎ সোহেল রানা ২ কোটি ২৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৯ টাকার তথ্য দেখাননি।

অভিযোগপত্রের তথ্যমতে, সোহেল রানার তিনটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। তাঁর জমা করা টাকার পরিমাণ ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৬৭ টাকা। ২০১২ সালে সোহেল রানার আয়কর রিটার্নে ব্যাংক ও নগদ টাকা দেখিয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৩ টাকা। অর্থাৎ সোহেল রানা ২৬ লাখ ১ হাজার ৮১৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তার হিসাবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৫৪ হাজার ৪৩ হাজার ৭৯৩ টাকার। এই মামলায় ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

সোহেল রানার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়ার মামলায় ঢাকার একটি আদালত সোহেল রানাকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ২৯ এপ্রিল বেনাপোলে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন রানা। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১৭৫ জন প্রাণ হারান। অনেকে আহত হন। হতাহত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পোশাকশ্রমিক।