ডাকসু নির্বাচনে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, সাফাই গাওয়া উচিত নয়: ঢাবি সিনেটে ভিপি নুরুল

নুরুল হক
নুরুল হক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনের সমাপনী দিনে বৃহস্পতিবারও মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ভিপি নুরুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে’। তবে ক্ষমতাসীন দল-সমর্থক শিক্ষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, নির্বাচনে তেমন ‘অনিয়ম’ হয়নি৷

ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ছাত্রলীগের সদিচ্ছার কারণে ‘অনিয়ম’ ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। যাঁরা এই নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করছেন, তাঁরা ডাকসুর নির্বাচন চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর জবাবে ভিপি নুরুল সিনেটের উদ্দেশে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের খবরগুলো আমরা মূলত গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। যদি কোনো অনিয়ম না-ই হয়ে থাকে, সৎসাহস থাকলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করুন। এই নির্বাচনে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, তাই সাফাই গাওয়া উচিত নয়৷’

সিনেট অধিবেশনে বক্তব্যের শুরুতে ভিপি নুরুল হক বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যবহৃত ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। আর ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার ছাত্রলীগের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি ব্যবহারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান৷

তিলোত্তমা শিকদার বলেন,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে একটি সার্টিফিকেটভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে, যা দুঃখজনক। পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদেশগামী হচ্ছেন। এখানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, মানসম্মত শিক্ষকও নেই৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক নেই—তিলোত্তমার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান সিনেটের শিক্ষক-প্রতিনিধি পাপিয়া হক। একে ‘ঢালাও মন্তব্য’ আখ্যা দিয়ে তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান তিনি। তবে উপাচার্য সেই দাবি আমলে নেননি।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বৈধ উন্নয়ন ফি নির্ধারণ, রেজিস্ট্রার ভবনের আধুনিকায়ন, জালিয়াত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করাসহ বেশ কিছু দাবি জানান তিলোত্তমা।

‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দাবি, উপাচার্যের নীরবতা’
সিনেট অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন। এ ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম।

তবে গণতান্ত্রিকভাবে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য শিগগিরই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রামেন্দু মজুমদার। তবে বিষয়টি এড়িয়ে যান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, ‘উপাচার্য সরকারের প্রতিনিধি। আমরা এখানে যাঁরা সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, সরকারি দল থেকেই নির্বাচিত হয়েছি। যাঁরা বিষয়টি এখানে উত্থাপন করেছেন, আমি মনে করি সেটি যথাযথ হয়নি। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়ের কাছে ব্যক্তিগতভাবেই উপস্থাপন করা উচিত।’

উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি নিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অধিবেশনে কোনো মন্তব্য করেননি, বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই অধ্যাপককে উপাচার্য পদে সাময়িক নিয়োগ দেন। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল শিক্ষকদের ‘সেশন বেনিফিট’ রহিত করার প্রস্তাব নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ দাবি করেন। পরে বিষয়টি পরবর্তী সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান৷

অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন মো. আবদুল আজিজ, অধ্যাপক নাজমা শাহীন, অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।