সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সুনামগঞ্জ পৌরশহরে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা। শহরের শিল্পকলা মোড় থেকে শুক্রবার সকালে তোলা। ছবি: খলিল রহমান
সুনামগঞ্জ পৌরশহরে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা। শহরের শিল্পকলা মোড় থেকে শুক্রবার সকালে তোলা। ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৪১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ মৌসুমে এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি।

তিন দিন ধরে সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে বেশি। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে পানি শহরের মাছবাজার, সবজিবাজার, উকিলপাড়া, সাহেববাড়ি ঘাট, বড়পাড়া, কাজীর পয়েন্ট, ওয়েজখালী এলাকায় ঢুকেছে। এসব এলাকায় রাস্তার ওপর কোনো কোনো জায়গায় হাঁটুপানি দেখা গেছে।

এ ছাড়া শহরের কালীবাড়ি, মোহাম্মদপুর, ষোলোঘর কলোনি এলাকায়, পূর্ব নতুন পাড়া, রায়পাড়া, সোমপাড়া, হাজিপাড়া, জামতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে। মানুষের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।

নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী প্রসেনজিৎ দে বলেন, রাত থেকে দুর্ভোগে পড়েছি। বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। রান্নাবান্নায় সমস্যা হয়েছে। নতুনপাড়া এলাকায় অনেকেরই এই অবস্থা। শহরের পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বাজার ও আশপাশের এলাকা। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কলাগাঁও ও আশপাশের এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর উপজেলায় পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে বলে জানান তিনি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে শুক্রবার সকালে হাঁটু সমান পানি ছিল। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রণজিৎ চৌধুরী জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী বোগলাবাজার, বাংলাবাজার ও নরসিংহপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জানান, উজান থেকে ঢল নামছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণে পানি বাড়ছে। ঢলের পানিতে বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় এই মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে উজান থেকে ঢল নামায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জে বন্যা হয়ে যাবে। পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব জায়গায় সুরমা নদীর পানি তীর উপচে ঢোকেনি। পৌর শহরে যে পয়োব্যবস্থা আছে, এতে এত বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই। তাই পানি নামছে না। এ কারণেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, বৃষ্টি হচ্ছে, উজান থেকে ঢলও নামছে, যে কারণে পানি বাড়ছে। আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সব উপজেলায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।