চট্টগ্রামে পানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ মন্ত্রী-সচিবের

মতবিনিময় সভায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়, ২৮ জুন। ছবি : জুয়েল শীল
মতবিনিময় সভায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়, ২৮ জুন। ছবি : জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। শুক্রবার বিকেলে ওয়াসার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেন তাঁরা। পানির দাম অন্তত ঢাকা ওয়াসার মতো করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

তবে চট্টগ্রাম নগরে পানি সংকট রয়েছে উল্লেখ করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। পানির দাম বাড়লে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করে দাম বাড়ানোর বিষয় চিন্তা করার পক্ষে মত দেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে ৪২ কোটি লিটার। উৎপাদন করা হয় ৩৬ কোটি লিটার। ঘাটতি আছে ৬ কোটি লিটার।

চট্টগ্রাম ওয়াসা চলতি বছরের শুরুতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল। আবাসিকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ৯ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং অনাবাসীকে ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা করা হয়। ঢাকায় আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১ টাকা ২ পয়সা এবং অনাবাসীকে ৩৫ টাকা ২৮ পয়সা। পানির দাম যেন ঢাকার ওয়াসার মতো হয় সে জন্য চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রামে ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে ৭১ হাজার ১৩০। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ১৯টি আবাসিক এবং বাকি ৭ হাজার ১১১টি অনাবাসিক গ্রাহক।

শুক্রবারের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ওয়াসাকে নিজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের চারটি ওয়াসার কোনোটিই লাভজনক ও স্বনির্ভর নয়। ঋণ, ভর্তুকি ও অন্যর ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেশি দিন বাঁচা যায় না। কখনো কখনো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই পানির দাম মাসে যদি ১০০ টাকা বেশি দেন, তাহলে বছর শেষে এক লাখ টাকা লাভ হবে। তাই যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁদের মানুষকে বোঝাতে হবে, পানির পয়সা দেবেন না, ভালো পানি পাবেন না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্যদের ইঙ্গিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যদি কোনোটি না বুঝে, এই না বোঝার স্রোতে আমাদের গা ভাসানোর দায়িত্ব না। আমাদের দায়িত্ব হবে, যেখানে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে তা মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী পানির অপচয় রোধ, বিল কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড পানির দাম যেন ঢাকা ওয়াসার মতো হয়—তা অনুমোদন দিতে পারে। কিন্তু বোর্ড সদস্যরা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বিরোধিতা করেন বলে শুনেছেন তাঁরা। যদি পানির দাম ঢাকার মতো নেওয়া যায় তাহলে সিস্টেম লস পুষিয়ে নিতে পারবে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
পানির অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার চালুর প্রস্তাব দেন সচিব।

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার পানির গড় বিল, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে বোর্ড। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা পড়েনি। আবার চট্টগ্রাম নগরে এখনো পানির সংকট দূর হয়নি। এই অবস্থায় পানির দাম বাড়ানো হলে গ্রাহকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা এমনিতেই বেশি টাকা দিয়ে কম পানি পাচ্ছেন।

এ ছাড়া নিরাপদ পানি সরবরাহের বিষয়টিতেও নজর দেওয়ার দাবি সাধারণ গ্রাহকদের। গত বছর নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, নয়াবাজার বড়পোলসহ বিভিন্ন এলাকায় জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত তিন ব্যক্তি মারা যান। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় তখন বিষয়টি তদন্ত করে ওয়াসার পানির কারণে জন্ডিস হয় বলে অভিযোগ করেছিল। পাইপ লাইনের ফুটোসহ নানা কারণে এই রোগ হয় বলে জানা গেছে। সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, নিরাপদ পানি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পানিবাহিত অনেক রোগ কমে যায়।

সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জানান, তিনি সব সময় ওয়াসার পক্ষে। পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হলে ভয়াবহ আকার ধারণ করত। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

তবে পানির পাইপ স্থাপনে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান মেয়র। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় পাইপ বসাতে একাধিকবার রাস্তা কাটা হয়। একটু সতর্ক হলে এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে জনভোগান্তি কম হবে।

সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ সংস্থার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বক্তব্য দেন ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম নজরুল ইসলাম ও শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম।