ধর্ষণের মামলায় ফাঁসাতে এমন কৌশল

জমিজমা নিয়ে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ এক নারীর। তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়ে কাবু করতে হবে। কিন্তু উপায় কী? ওই নারী গেলেন এক আইনজীবীর সহকারীর কাছে। তাঁর বুদ্ধিতে ভাড়াটে ‘ধর্ষক’ আনা হয়। তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ওই নারী চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেন।

জামালপুরের পুলিশ এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। তাঁরা হলেন মেলান্দহ উপজেলার রেখিরপাড়া এলাকার ফজল মিয়া (৪৫) ও খোশনবী (৩৫)। এঁদের মধ্যে ফজল ভাড়াটে ‘ধর্ষক’। আর খোশনবী একজন আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি)।

জামালপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।

সে মোতাবেক, গত ২৫ মে মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক নারী ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই নারী ৩০ মে মেলান্দহ থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি আসামি করেন নিজের চাচাতো ভাই মো. নুরনবী (৩০) ও নুরনবীর বোনের স্বামী মো. ছাইরুলকে (৩৫)। মামলায় নুরনবীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের এবং ছাইরুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়। পরে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রমাণও পায়। কিন্তু একটি সূত্রে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। তাতে যে তথ্য উঠে আসে, তাতে পুলিশের চোখই ছানাবড়া।

পুলিশ জানতে পারে, ওই নারীর সঙ্গে ৭ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে চাচাতো ভাই নুরনবীর। তিনি ওই চাচাতো ভাইসহ পাঁচজনের নামে আদালতে একটি মামলাও করেন। কিন্তু আসামিরা আদালতে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। ফলে চাচাতো ভাইকে কাবু করতে নতুন উপায় খুঁজছিলেন ওই নারী। তিনি শরণাপন্ন হন মুহুরি খোশনবীর। তিনি চাচাতো ভাইয়ের নামে ধর্ষণের মামলা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু মিছেমিছি ধর্ষণের মামলা দিলে তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যেতে পারে। সেটা এড়াতে খোশনবী নতুন বুদ্ধি আঁটেন। ২২ হাজার টাকা চুক্তিতে নিজের দূরসম্পর্কের মামা ফজল মিয়াকে ভাড়া করে আনেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী খোশনবী ২৫ মে রাতে ওই নারীকে নিয়ে মেলান্দহের কোনা মালঞ্চ ব্যাপারীপাড়া মোড়ের একটি ধানখেতে নিয়ে যান। সেখানে চলে আসেন ফজল মিয়াও। তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ওই নারী। পরে সেখান থেকে উদ্ধার দেখিয়ে তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে থানায় গিয়ে মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদ্‌ঘাটনের পর আমরা হতবাক। একজন মানুষকে ফাঁসানোর জন্য ইচ্ছা করে ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারী। মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি। পরে গত বৃহস্পতিবার ওই নারীকে আমার কাছে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। পরে বিকেলে তিনি আদালতে দণ্ডবিধির ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’ পরে পুলিশ জামালপুর শহর থেকে খোশনবীকে ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফজল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই দুজনও পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এখন মামলায় তাঁদের আসামি করা হবে। আর ওই নারীর চাচাতো ভাইদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।