সন্দ্বীপে দুই প্রবাসীকে পিটিয়ে পানিতে নিক্ষেপ

আহত প্রবাসী মো. সোহেল
আহত প্রবাসী মো. সোহেল

চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌযানে না ওঠায় দুবাইফেরত দুই প্রবাসী ভাইকে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছেন নৌযান শ্রমিকেরা। এ সময় শ্রমিকদের পিটুনিতে আহত হন একই পরিবারের আরও দুজন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের কুমিরা-সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ফেরিঘাটের গুপ্তছড়া অংশে এ ঘটনা ঘটে।

নৌযান শ্রমিকদের হামলার শিকার দুই প্রবাসী হলেন মো. সোহেল ও তাঁর ভাই মো. শিবলু। তাঁরা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারধরের সময় তাঁদের আরেক ছোট ভাই মো. শিহাবও আহত হন। নৌকায় নিজের সন্তানদের মারতে দেখে ঘাট থেকে প্রতিবাদ করায় তাঁদের বাবা মো. মানিককেও নাজেহাল ও মারধর করেন শ্রমিকেরা। আহতেরা সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুরের আলীমিয়ার বাজার এলাকার মান্দিরগো বাড়ির বাসিন্দা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নগরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. সোহেল গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের পরিবারের সাতজন কুমিরা থেকে সার্ভিস বোটে করে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে যাচ্ছিলেন। গুপ্তছড়া ঘাটে তীরে পানি কম থাকায় সার্ভিস বোট থেকে লাল বোটে করে যাত্রীদের তীরে নামানোর কাজ করছিলেন নৌযান শ্রমিকেরা।

এ সময় তাঁকে লাল বোটে নামার জন্য বলেন নৌযানটির মাঝি। কিন্তু যাত্রী বেশি হওয়ায় তিনি পরে নামবেন বলে মাঝিকে জানান। এ সময় মাঝি তাঁর সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদ করায় একপর্যায়ে তাঁকে জোর করে লাল বোটে নামিয়ে পেটানো শুরু করেন মাঝি ও শ্রমিকেরা। নৌযানটিতে থাকা গাছ দিয়ে চারজন মিলে তাঁকে মারধর করেন শ্রমিকেরা। ভাইকে মারতে দেখে অপর দুই ভাই এগিয়ে এলে তাঁরাও মারধরের শিকার হন। মারধরের একপর্যায়ে দুই প্রবাসীকে তীরের কাছাকাছি নিয়ে পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাঁরা।

সন্তানদের এগিয়ে নিতে ঘাটে আসা সোহেলের বাবা মো. মানিক মিয়া বিষয়টি দেখে আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় ঘাটের শ্রমিকেরা তাঁকেও নাজেহাল করেন। গুরুতর আহত সোহেলসহ চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে জখম গুরুতর হওয়ায় সোহেল ও শিবলুকে গতকাল নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই ঘাটটি পরিচালনা করছেন ইজারাদার এস এম আনোয়ার হোসেন। তিনি দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গুপ্তছড়া ঘাটে যাত্রীদের ওপর হামলার বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্দ্বীপ উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরে গতকাল বিকেলে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। সন্দ্বীপে এবি হাইস্কুল মাঠে ও শহরের হালিশহরে পৃথক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্দ্বীপ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।

সভায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। গতকাল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই ভাইকে দেখতে এসে ঘটনার দোষীদের শাস্তি পেতে হবে বলে জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল গুপ্তছড়া ঘাটে নৌযান উল্টে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে নৌযানে পারাপারে যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়।