পশুর হাটে এবার সিন্ডিকেট ভাঙছে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

সিন্ডিকেটের কারণে গেল বছর কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটের দরপত্র আহ্বানের পর অর্ধেক হাটের ইজারাদার পায়নি ডিএসসিসি। শেষ বেলায় গিয়ে ইজারা না হওয়া হাটগুলো খাস বরাদ্দ পান ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই। ইজারা না হওয়ায় সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এবার সিন্ডিকেট বড় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে জানালেন সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ঈদুল আজহার বাকি প্রায় দেড় মাস। ১৪টি হাটের দরপত্র আহ্বান করে ইতিমধ্যে ১১ টিতে ইজারাদার পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাকি তিনটিতেও ইজারাদার পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।

১০ জুন ১৪টি পশুর হাটের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৫ জুন ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। এই ১৪টি হাটের জন্য ৪০টি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা ১১ জনকে হাটের ইজারাদার হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় বাকি তিনটি হাটের জন্য পুনঃ দরপত্র দেওয়া হবে।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ১৫টি হাটের দরপত্র ঘোষণা করে ৭ টিতে ইজারাদার পেয়েছিল সংস্থাটি। বাকি ৮টি হাট থেকে খাস আদায় হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী খাস আদায়ের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধির হাটে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও স্থানীয় নেতা–কর্মীরাই এসব হাট নিয়ন্ত্রণে রাখতেন বলে জানিয়েছেন সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, এসব হাট থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা খাজনা আদায় করে নামমাত্র টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেন। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয় সিটি করপোরেশন।

এবার ১১টি হাটে ইতিমধ্যে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৪১ টাকার ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটি হাটের সরকার–নির্ধারিত সর্বনিম্ন দর ১ কোটি ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৮ টাকা।

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর কোরবানির অস্থায়ী হাট থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে ইজারা না হওয়া আটটি হাট থেকে খাস আদায় হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ওই হাটগুলোর ইজারার জন্য সরকার–নির্ধারিত সর্বনিম্ন দর ছিল ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইজারা হলে ওই হাটগুলো থেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাওয়া যেত বলে জানান ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, এবার দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইজারা হওয়া ১১টি হাটে নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরপত্রের চেয়ে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ টাকা বেশি পাওয়া গেছে।

>

পশুর হাটের ইজারা
এবার দক্ষিণ সিটিতে ১৪টি কোরবানির পশুর হাট বসছে
ইতিমধ্যে ১১ টির ইজারাদার পাওয়া গেছে

খাস আদায়ের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার ব্যাপক অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতেই সবগুলো হাটের ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। ২০ জুন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে এসব দরপত্রের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি হাটেরই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ঈদুল আজহার সময় যে হাটগুলো ইজারা দেওয়া যায়নি, সেগুলোর মধ্যে লালবাগ-চকবাজার থানাধীন বেড়িবাঁধ ও রাজনারায়ণ ধর রোডে হাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিএসসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। সামসাবাদ মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গার হাট থেকে খাস আদায় করেছেন বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন। গোলাপবাগ মাঠসংলগ্ন সিটি করপোরেশন স্কুলমাঠ ও ডিএসসিসির খালি জায়গায় হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া কাউয়ারটেকে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. রুমেল, ঢাকা হাইড মাঠে জাহিদুল ইসলাম ও পোস্তগোলা শিল্পাঞ্চলে কামাল পারভেজ হাট বসিয়ে খাস আদায় করেছিলেন।

যে হাটগুলোর ইজারা হয়েছে
এ বছর চূড়ান্ত হওয়া অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার সরকার–নির্ধারিত মূল্য ছিল ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ১৪৫ টাকা। ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকায় এই হাটের ইজারা হয়েছে। জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার নির্ধারিত মূল্য ছিল ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৭ টাকা। ৯৮ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে এই হাট।

৩২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবার ১ কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকায় ইজারা হয়েছে। শনির আখড়া ও ধনিয়া মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে।

লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাব–সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম–সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গার সরকার–নির্ধারিত দর ছিল ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ১৮১ টাকায় ইজারা হয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কাউয়ারটেক মাঠ–সংলগ্ন খালি জায়গার ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে। ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ২৮ লাখ ৫ হাজার ইজারা হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ১২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকায় ইজারা হয়েছে। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে।