ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের মামলায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কারাবন্দী সেই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আলালউজ্জামান ওরফে আলাল নামের ওই শিক্ষক উপজেলার কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার তথ্য আজ শনিবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিপ্লব সাখিদার।

উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর কলেজপড়ুয়া ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে ২২ জুন রাতে শিক্ষক আলালউজ্জামানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওই দিন রাতেই আলালউজ্জামানকে উপজেলার চিয়ারী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কারাগারে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরি সভা ডেকে ২৫ জুন আলালউজ্জামানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।

এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল মামলাটি আপস–রফার জন্য মেয়েটির অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে আসামিপক্ষের লোকজন আপস-মীমাংসার জন্য বলছে। কিন্তু তাতে রাজি হইনি।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শিক্ষক আলালউজ্জামান তাকে প্রেম নিবেদন করে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। মেয়েটি তার বাবাকে ঘটনাটি জানায়। পরে মেয়েটির বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে ওই ঘটনা জানান। এ নিয়ে দেনদরবারে বিবাদী (আলালউজ্জামান) জানান, তিনি ‘অনুতপ্ত’, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাবেন না বলে ক্ষমা চান। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা বিষয়টি মীমাংসায় রাজি হন।

মেয়েটি ২০১৮ সালে কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে রাজশাহীর একটি কলেজে ভর্তি হয়। শিক্ষক আলালউজ্জামান কিছুদিন আগে মেয়েটির মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে প্রেম নিবেদন করেন। কুপ্রস্তাব দেন। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় আলালউজ্জামান অশ্লীল বার্তাসহ মেয়েটির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। মেয়েটি তার বাবাকে এসব ঘটনা জানায়। এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা কাশিড়া উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে আলালউজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটির বিরুদ্ধে বদনাম রটান।

ঘটনার সময় ২২ মে কলেজ বন্ধ থাকায় মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিল। ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ির পূর্ব দিকে গভীর নলকূপসংলগ্ন পাকা রাস্তার সেতুর ওপর মেয়েটিকে একা পেয়ে আলালউজ্জামান তাকে যৌন হেনস্তা করেন। মেয়েটির চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে শিক্ষক দৌড়ে পালান। এ ঘটনায় ১৮ জুন বিবাদী (শিক্ষক) নিজে অথবা অন্য কারও সহযোগিতায় ‘পাশা ভাই’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মেয়েটির নামে অশ্লীল বার্তা লিখে পোস্ট করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জোবায়ের হোসেন বলেন, যৌন নিপীড়ন মামলার আসামি আলালউজ্জামান কারাগারে। শিগগিরই মামলাটির তদন্ত শুরু হবে।