পদ্মা সেতু এখন ২ কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান

পদ্মা সেতুতে ১৪ তম স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মা সেতুতে ১৪ তম স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো। ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুতে ১৪ তম স্প্যান বসানো হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে স্প্যানটি বসানো হয়। ১৪ তম স্প্যান বসানোর পরই পদ্মা সেতু এখন ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।

নদীর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে ১৪ তম স্প্যানটি বিকেলে ৪টার দিকে বসানো হয়। এখন পর্যন্ত সেতুর জাজিরা প্রান্তে নয়টি, মাওয়া প্রান্তে একটি অস্থায়ী, তিনটি স্থায়ী ও নদীর মাঝে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে।

সেতু বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে জানান, ১৪ তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। এ জন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেদিন বসানো যায়নি। পরদিন খুঁটির কাছে ডুবো চরে আটকে যায় ক্রেনটি। এর পর নদী খননের কাজ শুরু হয়। শনিবার সকাল থেকে স্প্যানটি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়।

মো. হুমায়ূন কবির আরও বলেন, আজ (শনিবার) যে কোনো মূল্যে স্প্যানটি বসানোর জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম। এ নিয়ে চলতি বছরের ছয় মাসে আটটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলো।

সবশেষ গত ২৫ মে ১৩ তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল। এদিন মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান। তখন সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।

১৪ তম স্প্যান বসানোর ফলে পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
১৪ তম স্প্যান বসানোর ফলে পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়। এটি সপ্তম স্প্যান। এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর গত ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যানটি। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২ তম স্প্যান বসানো হয়েছিল। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।

মূল সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দ্রুত কাজ এগিয়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছে, ২০২০ সালের মধ্যে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮৮টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬টি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই শেষ হতে পারে। ২৯৪টি পাইলে থাকবে মোট ৪২টি খুঁটি। এতে ৪১ টি স্প্যান বসবে।

দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।