বাগমারায় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির দায়ে শিক্ষকের দণ্ড

কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত
কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির দায়ে এক শিক্ষকের তিন মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এ কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকের নাম বিপুল কুমার প্রামাণিক। তিনি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিপুল কুমারের সাজার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের বদলি ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক বিপুল প্রায়ই ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তা বলতেন। এ নিয়ে এর আগে অভিভাবকদের কয়েকজন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন। এতে বিপুলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তবে সে সময় বিপুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে ক্লাস চলার সময় বিপুল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। ওই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। অবস্থা বেগতিক দেখে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে দেন সহকর্মীরা। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের ঘিরে রেখে স্লোগান দেন। এ সময় অন্য শিক্ষকেরাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে ক্ষুব্ধ লোকজনের বাধায় পুলিশ ব্যর্থ হয়। লোকজন ঘটনাস্থলেই অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিবেশ শান্ত হয়। তবে লোকজন বিপুলের শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন। এ সময় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় অর্ধডজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ইউএনওর কাছে শিক্ষক বিপুলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ দেন। পরে ইউএনও জাকিউল ইসলাম সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের অপরাধ স্বীকার করলে তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি ও পরিচালনা কমিটি বাতিলের আদেশ দেন। এই আদেশের পর ক্ষুব্ধ লোকজন অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও বাগমারার ইউএনও জাকিউল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খাতা দেখানোর নামে ছাত্রীদের কক্ষে ডেকে নিয়ে শিক্ষক বিপুল দীর্ঘদিন ধরে শ্লীলতাহানি করে আসছিলেন। ছাত্রীরা তাদের মাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আদালতের কাছে নির্যাতিত শিশু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা এসব অভিযোগ দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা বলেন, তিনি সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এমন অভিযোগের পর মাসখানেক আগে বিপুলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।

বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে না পৌঁছালে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। পুলিশ অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।