পাবনায় কলেজে বখাটেদের হামলা

শহীদ এম মনসুর আলী কলেজে বহিরাগত বখাটেদের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন। পাবনা, রাজশাহী, ২৯ মে। ছবি: হাসান মাহমুদ
শহীদ এম মনসুর আলী কলেজে বহিরাগত বখাটেদের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন। পাবনা, রাজশাহী, ২৯ মে। ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনার শহীদ এম মনসুর আলী কলেজে বহিরাগত বখাটেদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষকেরা বাধা দিলে বখাটেরা ক্যাম্পাসে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বখাটেদের বাধা দেওয়ায় তারা পিস্তল উঁচিয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষের প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বখাটেদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের সামনে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের আশপাশের এলাকার বখাটেরা প্রায়ই ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তারা শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। মাঝেমধ্যে ছাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে গিয়ে তাদের উত্ত্যক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে পাঁচ থেকে ছয়জনের একদল বখাটে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে বখাটেরা ছাত্রীদের বিশ্রামকক্ষে ঢুকে তাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বিষয়টি অধ্যক্ষসহ কলেজ প্রশাসনকে জানায়। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বখাটেদের কলেজ থেকে বের করে দেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, এর আধা ঘণ্টা পরেই ওই বখাটেরা আরও লোকজন নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা ভেতরে ঢুকে অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে বখাটেরা অধ্যক্ষের কক্ষ, বাইরে রাখা ফুলের টবসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। এ সময় অধ্যক্ষ এগিয়ে এলে বখাটেরা পিস্তল উঁচিয়ে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা একত্র হতে শুরু করলে ও পুলিশ আসার খবর পেয়ে বখাটেরা পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, বখাটেরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে অবস্থান নেন। বিক্ষোভ শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে কলেজে বখাটেপনা বন্ধ ও হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বখাটেরা দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ঢুকে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে আসছে। অনেক সময় গ্রাম থেকে কলেজে আসা বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে ও মারধর করে।

কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, বখাটেদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ বলেন, ‘বহিরাগত এই বখাটেদের অত্যাচারের মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বখাটেদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। বর্তমানে কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পাস এখন শান্ত আছে। সকালের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। কলেজের বখাটেপনা বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানো হবে।