বগুড়ায় ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প: এক দিনে ১৪ হাজার দরপত্র বিক্রি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরাদ্দের চিঠি আসে রাতে। পরদিন ১৪ হাজার ৫৩টি দরপত্র বিক্রি হয়। এই দরপত্র জমা নিতে বাক্সের বদলে ডেকোরেটর থেকে রঙিন কাপড় ভাড়া এনে একটি দরপত্রকক্ষ বানানো হয়। তাতে ১২ উপজেলার প্রতিটির জন্য একটি করে খোপ বানানো হয়।

২৩ জুন এভাবেই বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ১৭৪টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজের দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এসব সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরও) আজহার আলী মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরপত্র বিক্রির জন্য এক দিন সময় বেঁধে দিয়ে বুধবার (১৯ জুন) রাতে চিঠি পেয়েছি। ২০ জুন এক দিনেই জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের বারান্দায় ১২টি উপজেলার জন্য আলাদাভাবে দরপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলা কার্যালয় থেকেও দরপত্র বিক্রি করা হয়। এক দিনেই পৌনে দুই কোটি টাকার দরপত্র বিক্রি হয়েছে। দু-তিন দিন সময় পেলে পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র বিক্রি করা যেত।’ আজহার আলী আরও বলেন, বিপুল দরপত্র বিক্রি হয়। তাই বাক্সে জায়গা হবে না ভেবে ডেকোরেটর থেকে ভাড়া করে কাপড় এনে দরপত্র বাক্স বানাতে হয়েছে। এতে ২৫ হাজার টাকা ডেকোরেটর বিল গুনতে হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার ১২ উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তায় সর্বোচ্চ ১৫ মিটার দীর্ঘ এবং ১২ ফুট উচ্চতার ১৭৪টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। ১৯ জুন রাতে অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়। মাত্র এক দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে। ২০ জুন দরপত্র বিক্রি করা হয়। আর জমা নেওয়া হয় ২৩ জুন, শুধু জেলা সদরের ওই দরপত্রকক্ষে। এ দরপত্র যাচাই–বাছাই শেষে আগামী ১০ জুলাই লটারির মাধ্যমে কাজ বণ্টন করা হবে।

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য ১ হাজার এবং ২০ লাখের ওপরে বরাদ্দের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা দরপত্রমূল্য নির্ধারণ করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৩টি প্রকল্পে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ১৭৭টি দরপত্র বিক্রি হয়। শিবগঞ্জে ২৬টির দরপত্র বিক্রি হয় ২ হাজার ১০৪টি। আয় হয় ২৯ লাখ টাকা। গাবতলী উপজেলায় ১৯টি প্রকল্পে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮৬১টি দরপত্র বিক্রি হয়। ধুনট উপজেলায় প্রকল্পসংখ্যা ১২। এখানে ১ হাজার ৭৯টি দরপত্র বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা।

আদমদীঘি উপজেলায় ১৬টি প্রকল্পে ১২ লাখ টাকার ৭৯০টি দরপত্র বিক্রি হয়। সোনাতলা উপজেলায় ১০টি প্রকল্পে ৯২১টি দরপত্র বিক্রি থেকে আয় হয়১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। শেরপুর উপজেলায় ১২টি প্রকল্পে ৮৪৩টি দরপত্র বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শাজাহানপুর উপজেলায় ১৯টি প্রকল্পে ১ হাজার ৫৮০ দরপত্র বিক্রি করে সরকার আয় করে ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বগুড়া সদর উপজেলায় ১৫টি প্রকল্পে ১৮ লাখ টাকার ১ হাজার ৩৭৬টি দরপত্র বিক্রি হয়।

সদর উপজেলার আরেকজন ঠিকাদার বলেন, এক দিনেই ১৪ হাজার দরপত্র বিক্রি হওয়াটা অবিশ্বাস্য। সম্ভবত চিঠি আসার আগেই পছন্দের ঠিকাদারের কাছে দরপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলার একজন ঠিকাদার বলেন, এক দিন সময় দিয়ে কোনো দরপত্রের কার্যক্রম আগে হয়নি। এতে সাধারণ ঠিকাদারদের অনেকেই দরপত্র কিনতে পারেননি। অধিকাংশ কাজ প্রভাবশালী কিছু ঠিকাদারের কবজায় যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, অর্থবছরের শেষ দিকে বরাদ্দের অর্থ ছাড় দেওয়ার কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করার তাগাদা ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের। এ কারণে অল্প সময় বেঁধে দিয়ে তারা বরাদ্দের চিঠি পাঠায়। তিনি আরও বলেন, একদিনে দরপত্র বিক্রি করা হলেও সব ঠিকাদারই তা সংগ্রহ করেছেন। কারণ তাঁরা আগে থেকেই খোঁজখবর রেখেছিলেন। কারো কোনো অভিযোগ ছাড়াই দরপত্র বিক্রি ও গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এটা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্নও তোলেননি।